বিধবা জোসনা বেগম (৫০)। স্বামী আহাদ আলী মারা গেছেন ২০ বছর আগে। মারা যাওয়ার সময় দুই বছর ও একমাস বয়সের দুটি কন্যা সন্তান রেখে যান। বড় মেয় মিম, ছোট মেয়ে সুমাইয়া ও বৃদ্ধা মা মতি বেগমকে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার। বাস করেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার আড়ুয়াবর্নী চরপাড়া গ্রামে। স্বামীর মৃত্যুর পর চারজনের জীবন বাঁচাতে জোসনা মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন অফিসে ঝাড়ুদারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মেয়েরা বড় হলে দেখা যায় ছোট মেয়ে সুমাইয়া আক্তার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। অন্যদিকে মা মতি বেগমও অসুস্থ। তাঁদের চিকিৎসার জন্য টাকার জন্য প্রয়োজন। অনেক দৌড়ঝাঁপ করে মেয়ের জন্য সমাজ সেবা দপ্তর থেকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পান। ভাতার কার্ড পাওয়ার পর ২০১৬ সালে তাঁর সাথে চিতলমারী সদর বাজারস্থ সোসাইটিস উ্য-মেন অরিজিন্স-এসডিও’র পরিচালক কাজী নাসির উদ্দিনের সাথে পরিচয় হয়।
পরিচয়ের সূত্র ধরে নাসির তাঁর এজিওতে বিভিন্ন প্রকল্পে বিভিন্ন মেয়াদে লাভের প্রলোভন দেখিয়ে হিসাব খুলতে বলেন। এসডিও’র ওই কর্মকর্তার প্রলোভনে পড়ে জোসনা বেগম তখন সুমাইয়ার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা মাসিক সঞ্চয় হিসেবে, বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসার জন্য মায়ের নামে ও নিজের নামে স্থায়ী আমানতসহ মোট তিনটি হিসেবে ১ লাখ ৯ হাজার ২০০ টাকা জমা রাখেন। মেয়াদান্তে লাভসহ এখন জোসনা বেগমের পাওনা ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। গত দেড় বছর ধরে তিনি নাসির উদ্দিন তাঁর অফিসে গিয়ে বারবার ধর্ণা দিয়েও কোন টাকা পাননি। এখন নাসির উদ্দিন এনজিও অফিস ছেড়ে দিয়ে কর্মচারীসহ লাপাত্তা হয়ে গেছেন।
অপরদিকে তিলেতিলে জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে ঝাঁড়ুদার জোসনা বেগম তাঁর প্রতিবন্ধি মেয়ে সুমাইয়া (২০) ও বৃদ্ধা মা মতি বেগমের (৭৫) চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এ ঘটনায় কষ্টার্জিত ও ভাতার টাকা ফেরত পেতে জোসনা বেগম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দায়েরকৃত ওই অভিযোগ পত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জোসনা বেগম বলেন, “এতিম দুটি মেয়ে ও বৃদ্ধ মারে মেলাকষ্টে খাইয়ে নাখাইয়ে বাঁচায় রাখছি। নাসিরের কথা মত দুইজনার চিকিৎসার জন্য টাকা জমালাম। এহন ডাক্তার দ্যাহাবো। টাকা দেচ্ছে না। নাসির ও ওর ম্যানেজার পালায়ছে। ফোন দিয়া টাকা চালি হুমকি-ধামকি দেয়। ওরা শতশত মানষির টাহা মারিয়া দেছে।”
এ ব্যাপারে সোসাইটিস উ্য-মেন অরিজিন্স-এসডিও’র পরিচালক কাজী নাসির উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, “অসুস্থা জনিত কারণে ৭ বছর আমি অফিসে যাই না। ফিল্ডে আমাদের দেড় কোটি টাকা পড়ে আছে। ওই টাকা পেলে জোসনা বেগমসহ যারা পাওনাদার আছেন তাঁদের টাকা ফেরত দিব। এজন্য চিতলমারী আলিয়া মাদ্রাসার সুপার মোঃ ইদ্রসুর রহমান হুজুরকে দায়িত্ব দিয়েছি।”
চিতলমারী আলিয়া মাদ্রাসার সুপার মোঃ ইদ্রসুর রহমান বলেন, “আমাকে বলেছিল বিষয়টি দেখতে। কিন্তু মানুষ টাকা ফেরত না দিলে আমি কি করতে পারি।”
তবে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমার দপ্তরে জোসনা বেগম নামের এক নারী অভিযোগটি করেছেন। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। এ ঘটনায় তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খুলনা গেজেট/এনএম