মঙ্গলবার । ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ । ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

হামজাদের আগুনে ম্যাচ আজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সকালে পাঁচতারকা হোটেলের লিফটে জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে দেখা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ ফিল সিমন্সের। সোমবার নাশতার টেবিলে যেতে যেতে বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ককে সিমন্সের প্রশ্ন ভারত ম্যাচ তো অনেক চাপের? মুখে চওড়া হাসি দিয়ে জামালের উত্তর ছিল, ‘চাপ সবসময় থাকে।’

ক্রিকেটে বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথের উত্তাপটা অনুভব করেছেন বলে ক্যারিবীয় এ কোচও জানেন দুই প্রতিবেশীর লড়াই কতটা রোমাঞ্চিত। আছে আবেগ, আছে উচ্ছ্বাস, আছে লড়াইয়ের আগুন। ফুটবলের সবুজগালিচা কিংবা ক্রিকেটের বাইশ গজ; বাংলাদেশ-ভারত লড়াই মানেই বাড়তি উন্মাদনা। তাই তো বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল লড়াইটি এই অঞ্চলের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এখন দক্ষিণ এশিয়ান ডার্বি। এ বছরের শেষ ডার্বিতে আজ ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব থেকে দুই দলই বিদায় নিয়েছে। গ্রুপ ‘সি’তে সমান ২ পয়েন্ট বাংলাদেশ ও ভারতের। প্রতিযোগিতার বিচারে এই ম্যাচটি শুধু নিয়ম রক্ষার। কিন্তু লড়াইটি যখন বাংলাদেশ-ভারতের, তখন সেটা কোনো প্রতিযোগিতার গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকে না। সর্বশেষ গত মার্চে শিলংয়ে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রথম লেগে মাঠে শ্রেয়তর দল হিসেবে পারফরম্যান্স করলেও গোল শূন্য ম্যাচে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল পারেনি ভারত জুজু কাটাতে। সেই ম্যাচে প্রথমবার লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানো হামজা চৌধুরী তাঁর ফুটবল শৈলী দেখিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের হয়ে চার গোল করা হামজা তো এখন শুধু দক্ষিণ এশিয়ারই নন, এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সেরা তারকা। তাই তো দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভারতকে হারানোর যন্ত্রণার কাটা দাগ হামজার ভেলায় চড়ে মুছতে চায় বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে হামজার রসায়নটা বেশ জমেছে। নেপাল ম্যাচে জামালের চোখ ধাঁধানো ভলিতেই অসাধারণ গোল করেছিলেন হামজা। লেস্টার সিটির এ তারকার পাল্টা হিসেবে ভারতীয় দল ঢাকায় নিয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী রায়ান উইলিয়ামসকে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ফুটবল ফেডারেশনের ছাড়পত্র মেলেনি এ ফরোয়ার্ডের।

আজ গ্যালারি যে পরিপূর্ণ হবে তা অনুমেয়। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে সমর্থকদের এই আবেগ ছুঁয়েছে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকেও। গতকাল ম্যাচ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এটা অনেক আবেগের ম্যাচ, হাই ভোল্টেজ ম্যাচ। এই ম্যাচের পর জাতীয় দলের জন্য অনেক লম্বা গ্যাপ আছে। বছরটা যদি জয় দিয়ে শেষ করতে পারি তা শুধু আমাদের জন্য নয়, সমর্থক ও আপনাদের জন্যও ইতিবাচক হবে।’

র‍্যাঙ্কিংয়ে অনেক তফাৎ। ভারত ১৩৬ আর বাংলাদেশ ১৮৩তম। তবে এটাকে সেফ্র সংখ্যা হিসেবে নিচ্ছেন জামাল। ‘কালকের (আজ) ম্যাচে অনেক ফ্রি কিক হবে, হলুদ কার্ড হবে, স্লেজিং হবে। তবে আমি এটা স্বাভাবিক ম্যাচ হিসেবে ধরব। এই ম্যাচের তাৎপর্য আমি জানি।’ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরাও টের পাচ্ছেন দক্ষিণ এশিয়ার ডার্বিখ্যাত এ ম্যাচে, ‘আমি মনে করি, এই ম্যাচে অনেক আবেগ জড়িত, ডার্বির আবহটা সবার জন্যই স্পেশাল। দলের আবেগ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করি, সেটাই আসল। এই ম্যাচের গুরুত্ব আমাদের প্রেরণা দিচ্ছে, এটা ভালো, কিন্তু আমরা দল নিয়ে আলোচনা করেছি যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করাটাও জরুরি, যেন জিততে পারি। কারণ আমাদের সামর্থ্য আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। তাই ভারতের বিপক্ষে অবশেষে জয়ের সুযোগটা নিতে হবে।’

৩ পয়েন্ট পেতে হলে শেষ মিনিট পর্যন্ত মনঃসংযোগ ধরে রাখতে হবে রাকিব হোসেন-সাদ উদ্দিনদের। এই বিষয়টি নিয়ে ফুটবলারদের আলাদা ক্লাস করিয়েছেন ক্যাবরেরা। ভারতের বিপক্ষে শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়াই করতে চান তপু বর্মণ-শমিত সোমরা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন