বহু বাধা, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং সীমিত সুযোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রথম নারী ট্রায়াথলেট মারিয়া ফেরদৌসী আক্তার আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন। ১২ অক্টোবর মালয়েশিয়ার লাংকাউইতে অনুষ্ঠিত আয়রনম্যান ৭০.৩ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনি প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে কোয়ালিফাই করেছেন।
মাত্র ৮ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১.৯ কিলোমিটার সাঁতার, ৯০ কিলোমিটার সাইক্লিং এবং ২১.১ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করে বয়সভিত্তিক গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন মারিয়া।
এই অর্জনের পর এবার মারিয়া আগামী নভেম্বরে স্পেনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আয়রনম্যান ৭০.৩ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে যাচ্ছেন। ফেরদৌসি মারিয়ার এবারের যাত্রা সফল করতে টাইটেল স্পন্সর হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছে বিটোপিয়া গ্রুপ। রোববার (২৭ অক্টোবর) বিটোপিয়া কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান সাবিনা আক্তার এবং মারিয়া ফেরদৌসির মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনি স্বপ্ন পূরণের এ যাত্রার সারথি হওয়ায় বিটোপিয়া গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি পূর্ববর্তী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ট্রেনিং শুরু হওয়ার সময় সবাই তাকে নিরুৎসাহিত করেছিল। তার কাছে সাইকেল ছিল না, অন্য একজনের কাছ থেকে সাইকেল নিয়ে অনুশীলন করেছেন। মালয়েশিয়া যাওয়ার মাত্র ২১ দিন আগে সবাইকে জানান তিনি অংশ নিচ্ছেন।
মারিয়া বলেন, ‘আয়রনম্যানের বিষয়ে জানতে গুগলে সার্চ করলে দেখি, বাংলাদেশি কোনো মেয়ের রেকর্ড নেই। তখনই মনে হলো, যদি অন্য দেশের মেয়েরা পারে, আমি কেন পারব না? যাওয়ার আগে সবাই বলেছিল আমি পারব না। কিন্তু আমার জেদ আরও বেড়ে যায়। এর আগেও বাংলাদেশে ৭ ঘণ্টা ২০ মিনিটে একটি ইভেন্ট শেষ করেছি, কিন্তু কাউকে বলিনি। সংকল্প ছিল- ফিনিশ করব, না হলে সেখানেই শেষ।’
দেশের প্রথম এই নারী আয়রন লেডি জানান, মালয়েশিয়ায় গিয়ে তিনি জীবনে প্রথম সমুদ্র দেখেন। প্রতিযোগিতায় ১.৯ কিলোমিটার সাঁতার ৫৩ মিনিটে, ৯০ কিলোমিটার সাইক্লিং এবং ২১ কিলোমিটার দৌড় শেষে ফিনিশ লাইনে পৌঁছান। তার বয়সভিত্তিক গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত হয় এবং তিনি বাংলাদেশি প্রথম নারী আয়রনম্যান কোয়ালিফায়ার হিসেবে স্বীকৃতি পান।
মারিয়া আরও বলেন, ‘ফিনিশ লাইনে নিজের নাম, বাংলাদেশের পতাকা ও সময় দেখে মনে হলো, যারা আমাকে বেঁধে রাখতে চেয়েছিল, হয়তো আজ তাদের হারিয়ে দিলাম।’ মারিয়ার এই যাত্রা সফল করতে পাশে দাঁড়িয়েছে বিটোপিয়া গ্রুপ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিটোপিয়া গ্রুপের সিইও মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, একটি ক্ষুদ্র জায়গা থেকে উঠে এসে বড় কিছু এচিভ করার জন্য যেই মাইন্ডসেট বা মানসিকতা দরকার, তা তিনি মারিয়ার মধ্যে লক্ষ্য করেছেন। বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার কর্মী নিয়ে এগিয়ে চলা বিটোপিয়া গ্রুপের এই সমর্থনের পর মারিয়া এখন স্পেনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন। মনির হোসেন মারিয়ার জন্য শুভকামনা জানিয়ে দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন যে মারিয়া দেশের পতাকাটাকে অনেক উপরে তুলে ধরবে।
মনির হোসেন বলেন, ‘মারিয়ার গল্প আমাদের জন্য প্রেরণা। সীমিত সুযোগের মধ্যেও কঠোর পরিশ্রম এবং সংকল্প কতটা বড় ফল দিতে পারে, তা তিনি প্রমাণ করেছেন। আমরা তার পাশে থাকব, যাতে তিনি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন এবং দেশের ক্রীড়া জগতে অনুপ্রেরণার প্রদীপ জ্বালান।’
বিটোপিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবিনা আক্তার বলেন, ‘মারিয়া শুধু একজন ক্রীড়াবিদ নয়; তিনি দেশের মেয়েদের জন্য একটি শক্তিশালী উদাহরণ। আমাদের দায়িত্ব হলো তাকে সমর্থন দেওয়া, যাতে তার সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্প আরও তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছায়।

