দৌলতপুর থানাধীন খুলনা যশোর-মহাসড়ক সংলগ্ন মহেশ্বরপাশা মানিকতলায় অবস্থিত মসজিদুল মেরাজ। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা এবং দৃষ্টিনন্দন। দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট এ মসজিদটি দিনে রাতে উভয় সময় ফুলের মত প্রস্ফুটিত থাকে। রাতে মসজিদের সবুজ বাতির আলোয় সুউচ্চ মিনারটি মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মসজিদে নববী’র আদলে তৈরি মিনারটি সমতল ভূমি থেকে ৮২ ফুট উঁচু। মিনারের নিচে মসজিদের সামনের দেয়ালে স্থাপন করা ফুলের নকশা খচিত রঙ্গিন গ্লাস দিনে রাতে সব সময় উজ্জ্বলতা ছড়ায়। দোতলা এবং নিচতলা মিলে মসজিদটিতে প্রায় ৭০০ মুসল্লি’র একত্রে নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের সামনে মুসল্লিদের বসার সুব্যবস্থা এবং খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মসজিদটির সৌন্দর্য দেখার জন্য ভিড় জমায়।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে মাওলানা আতিকুল্লাহ, খলিলুর রহমান, সামাদ সরদার, মোশারফ হোসেন, মাহাতাব সাহেব, চৌধুরী এ বারীসহ স্থানীয় কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষের উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে প্রথমে স্থানটিতে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। খলিলুর রহমান নামে স্থানীয় একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান নামমাত্র মূল্যে তার নিজস্ব ৫ শতক জায়গা মসজিদটি নির্মাণের জন্য প্রদান করেন।
পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বেলায়েত হোসেন নামে এক ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত ১২ দশমিক ২৫ শতক জায়গা মসজিদটি সম্প্রসারণের জন্য প্রদান করেন। বর্তমানে ১৭ দশমিক ২৫ শতক জায়গা নিয়ে মসজিদটির বিস্তৃতি। মসজিদ লাগোয়া বাম পাশে রয়েছে সুন্দর একটি অজুখানা। নিচ তলায় ৮ লাইনে একত্রে প্রায় সাড়ে তিন ‘শ এবং মসজিদের দোতালায় সমপরিমাণ মুসল্লী’র একত্রে নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের ভেতরের ফ্লোর এবং দেয়ালে স্থাপন করা হয়েছে মূল্যবান টাইলস। নিজ পছন্দে সেলিনা খানম নামে ঢাকায় বসবাসকারী স্থানীয় এক মহিলা মসজিদের সামনে স্থাপন করা ফুলের কারুকাজ খচিত রঙ্গিন গ্লাস ফ্যাক্টরি থেকে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে তৈরি করে উপহারস্বরূপ প্রদান করেছেন। এছাড়াও তিনি মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য স্থাপন করা টাইলস এবং মিস্ত্রি খরচ বহন করেছেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি বেলায়েত হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে মসজিদটির সম্প্রসারণ এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু হয়, যা এখনও চলমান রয়েছে। আগে মসজিদটি স্বল্প পরিসরে ছিল। ১৯৯৬ সালে মসজিদটি সম্প্রসারণের জন্য আমার ব্যক্তিগত ১২ দশমিক ২৫ শতক জায়গা প্রদান করি। তিনি বলেন, ২০১০ সালে আমি পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে সৌদিআরব যায়। সেখানে মসজিদে নববী’র মিনারটি দেখে আমি অভিভূত হয়। মনে মনে স্বপ্ন দেখি এবং নিয়ত করি আমাদের এই মসজিদের উপর এমন একটি মিনার তৈরি করব। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার সে স্বপ্ন পূরণ করেছেন। মিনারের ডিজাইনটা আমাদের নিজেদের করা। মসজিদটির সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আমাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে। ঢাকায় বসবাসকারী স্থানীয় এক বোন আমাদের এ কাজে যথেষ্ট আর্থিক সহায়তা করেছেন’।

মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হামিদ, বলেন, মসজিদে নববী’র আদলে মিনারটি তৈরি করা হয়েছে। রাজশাহী থেকে ডিজাইন মিস্ত্রি চার মাস ধরে গম্বুজ এবং মিনারের কাজটি করেছে। মিনার এবং গম্বুজ বাতি দিয়ে সবুজ করা হয়েছে। সবুজ বাতির সুউচ্চ মিনারসহ মসজিদটি দিন -রাত সব সময় মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে’।
স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি আজিজুর রহমান স্বপন বলেন, ‘অপূর্ব সৌন্দর্যে ভরা, দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি আমাদের এ এলাকার সৌন্দর্য অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বছরে মসজিদের সম্প্রসারণ এবং সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ দৃশ্যমান হওয়ার পর থেকে পূর্বের তুলনায় মসজিদে মুসল্লির সংখ্যাও বেড়েছে। মসজিদের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে অনেকে আগ্রহের সাথে নামাজ আদায় করতে আসেন। আমরা এলাকাবাসী মসজিদ’টার জন্য গর্ববোধ করি।’
মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘খুলনার মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ হচ্ছে দারুল উলুম মাদ্রাসা মসজিদ। এটির পর দ্বিতীয় যদি কোন দৃষ্টিনন্দন মসজিদ ধরা হয় সেটি হচ্ছে মসজিদুল মেরাজ। মসজিদটির সৌন্দর্য দেখার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন লোকজন আসে। অনেকে মানুষ ছবি তুলে নিয়ে যায় এ কারণে যে, ভবিষ্যতে তাদের এলাকায় মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করলে এ আদলে করবেন। তিনি বলেন, এলাকার মুসল্লী, মসজিদ কমিটির প্রচেষ্টা বিশেষ করে মসজিদ কমিটির সভাপতির আন্তরিক প্রচেষ্টায় দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণীয় একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় পূর্বের তুলনায় মুসল্লির সংখ্যাও বেড়েছে’।
খুলনা গেজেট/এইচ