বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২
৭০০ ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রোপণ

খুবি’র সবুজায়নে আহ্ছানউল্লা হল প্রশাসনের প্রশংসনীয় উদ্যোগ

আল মামুন, খুবি

প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য এক সুস্থ ও শীতল পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা হল প্রশাসন নিয়েছে এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ। হল প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় ফলজ ও বনজ মিলিয়ে রোপণ করা হয়েছে প্রায় ৭০০টি বৃক্ষ। এই সবুজায়ন কেবল হলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে না, বরং তীব্র গ্রীষ্মকালে দেবে স্বস্তি, যা শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনে আনবে এক শান্তির পরশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলের চতুর্দিক, সম্মুখ গেট এবং হলের ভেতরে খোলা জায়গায় রোপণ করা হয়েছে নানা প্রজাতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষ। ফলের মধ্যে রয়েছে, পেয়ারা, কাঁঠাল, সবেদা, তেঁতুল, লেবু, আম, গোলাপজাম, জলপাই, চালতা, বিলাতি গাব, ডেউয়া, জাম, আমড়া, জামরুল, লটকন, আঁশফল, বেল/কদবেল, বহেরা, হরীতকী, নিম, অর্জুন, বাসক, মেহেদি ইত্যাদি।

অন্যদিকে, হলের পরিবেশকে মনোরম ও সুবাসিত করতে লাগানো হয়েছে বকুল, কৃষ্ণচূড়া, কামিনী, কদম, ছাতিম, জারুল, বেলিফুল, গন্ধরাজ, রঙন, বোতল ব্রাশ, মাধবীলতা, পলাশ, পাতাবাহার, আলমন্ডা, করবি, সিজিয়াম, কাঠগোলাপ, কাঞ্চন, অলসাইড, হাসনাহেনা, গোলাপ, প্রমিলা এবং নানা বিদেশি ফুলের প্রজাতি। এই গাছগুলো আগামীতে ক্যাম্পাসকে যেমন সবুজে মুড়ে দেবে, তেমনি মনকে করবে শান্ত বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হল প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সানন্দে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম হাসান বলেন, “হল প্রশাসনের এই উদ্যোগ সত্যিই দারুণ। আমরা ছাত্ররা সব সময় চাই হল প্রাঙ্গণটা যেন সবুজ ও শীতল থাকে। আগে গ্রীষ্মকালে হল চত্বরে খুব গরম লাগত, কিন্তু এখন গাছ লাগানোয় আশা করছি সামনে পরিবেশ অনেক স্নিগ্ধ হবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, বিশেষত ক্যাম্পাসে গাছ নিধনের ঘটনা যখন আলোচিত, তখন এই উদ্যোগকে তিনি প্রশংসনীয় মনে করেন।
আরেক আবাসিক ছাত্র খালিদ মাহমুদ প্রশাসনের উদ্যোগকে অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে মনে করেন।

তাঁর মতে, “এত গাছ লাগানোয় আমরা ছাত্ররা মনে করি হলের পরিবেশ অনেক বদলে যাবে, প্রচণ্ড গরমের দিনেও একটা শীতল ও স্নিগ্ধ ভাব থাকবে।”

তিনি আরও যোগ করে বলেন, “হলের সবুজ পরিবেশ শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমানোতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া যখন ফলের গাছগুলো বড়ো হবে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে প্রয়োজনীয় ফল খেতে পারবে যা শিক্ষার্থীদের বাড়তি পুষ্টির জোগান দিবে।”

আহ্ছানউল্লা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর শরিফ মোহাম্মাদ খান এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য নিয়ে জানান, “আমাদের এই উদ্যোগের মূল বিষয় হলো প্রকৃতির পরিবেশ ঠিক রাখা এবং ছাত্ররা যেন সুস্থ সুন্দর ভাবে চলাফেরা করতে পারে সেই পরিবেশ বজায় রাখা। আমরা মনে করি, গাছ লাগানো একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং এটি একটি সদকায়ে জারিয়া।”

তিনি আরো জানান, এই মহৎ উদ্যোগে তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রভোস্ট আবুল বাশার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। মালী সংকট থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে মালী এনে যত্নের সঙ্গে গাছগুলোর পরিচর্যা করা হচ্ছে।

পুরো হলকে সবুজ চাদরে মোড়াতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা উল্লেখ করে প্রভোস্ট বলেন, “হলসংলগ্ন একটি বাইপাস রাস্তায় গাছ লাগানোর জন্য সেটি বন্ধ করা হলেও ছাত্ররা তখন প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ এখন হল ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এক সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার পথে।”

আহ্ছানউল্লা হল প্রশাসনের এই সাতশো বৃক্ষরোপণ কেবল পরিবেশ রক্ষার একটি পদক্ষেপ নয়, এটি ভবিষ্যতের প্রতি এক বিনিয়োগ।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন