‘ইলিশ এহন আর গরিব ম্যানসের জন্য না, আমাগোর মতো ইজিবাইক চালকদের জন্য না, ওর গায়ে আগুন, পাঙ্গাসমাছ কিনতে কষ্ট হয়ে যায় সেখানে ইলিশ ক্যামনে কিনমু ?’
এভাবে কথাগুলো বলছিলেন ইজিবাইক চালক দিদারুল। মঙ্গলবার (১ জুলাই) নগরীর ৫ নং ঘাট পাইকারী মৎস্য আড়তের সামনে খুলনা গেজেটের এ প্রতিবেদকের কথা হয় দিদারুলের। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সংসার তার।
আষাঢ় থেকেই ভরামৌসুম চলে ইলিশের। সরবরাহ কম, দামও চড়া। ফলে দর চড়েছে আকাশচুম্বি। এখন নিম্নআয়ের মানুষের পাতে ইলিশ মানেই যেন দুঃস্বপ্ন। ইলিশের বর্ধিত এমন মূল্যে ক্ষোভ ক্রেতাদের।
জেলেদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার ঘাটতি, বৈরী আবহাওয়া, হাত বদল, বিদেশে রপ্তানির শঙ্কা, সিন্ডিকেট, নিয়মিত বাজার মনিটরিং এর অভাব এবং অসাধু ব্যাবসায়ী এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারের খুচরা বিক্রেতা ইকবাল বলেন, “এ বছর এখন পর্যন্ত সরবরাহ বেশ কম, গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি কেজি ইলিশ কিনতে অতিরিক্ত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে। আমাদের যদি অতিরিক্ত দামে কেনা লাগে তাহলে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে- এটাই স্বাভাবিক।”
রূপসা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে মৎস্য আড়ৎ। যেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ক্রয়-বিক্রয় হয়। জেলেরা সরাসরি নদী ও সাগর থেকে মাছ আহরণ করে বিক্রয় করার জন্য এই মৎস্য আড়তে আসেন ট্রলার বা ফিসিংবোটে করে। তাছাড়া বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মানুষ মাছ বিক্রির জন্য এখানে একত্রিত হন, যেটি প্রভাতে বসে থাকে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, রূপসা মৎস্য আড়তে ২৫০-৪০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, ৫০০-৭০০ গ্রামের ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা,৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজির ১ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কেজি থেকে ১ কেজি ৫০০ গ্রাম ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা, ১ কেজি ৫০০ গ্রাম থেকে ২ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা দরে ক্রয় করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
রূপসা বাজারে আসা আব্দুর রহিম নামের এক ক্রেতা খুলনা গেজেটকে জানান, “ইলিশ কিনতে গেলে চোখের পানি চলে আসারমত অবস্থা হয়। অথচ একসময় ইলিশের দাম ছিলো কম এবং খেতেও বেশ সুস্বাদু। ইলিশ বছরে খাওয়া হয় না বলা যায় তবে পোলাপানের আহ্লাদে মাঝে মধ্যে দাম বেশি হলেও কেনা লাগে।”
অতিরিক্ত মূল্য থাকায় সাত রাস্তার স্থায়ী বাসিন্দা আয়েশা খাতুন মাছ ক্রয় করতে পারেনি। তিনি বলেন, “ বাজেট আমার সাধ্যের বাইরে, জাতীয় মাছের আরেক নাম এখন আগুন, আগুন যেমন ধরা ছোয়ার বাইরে এটাও তাই।”
ঝিনাইদহ কালিকঞ্জ থেকে রূপসা আড়ৎ এ পাইকারি মাছ কিনতে আসা একব্যক্তি মাছের দর বেশি থাকায় ক্রয় না করে ফিরে যান। তিনি বলেন, ” মাছের দাম গত বছরের তুলনায় এবছর বেশি,মাছের সরবরাহও কম।”
নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারে প্রতিকেজি ইলিশের মূল্য ২০০ গ্রাম থেকে ৪০০ গ্রাম ১২০০ টাকা, ৪০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা, ১ কেজি থেকে ১ কেজি ৫০০ গ্রাম ২৩০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা।
রূপসা আড়তের পাশেই রয়েছে কেসিসি বাজার। সেখানকার ৪০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম ১৬০০ থেকে ২২০০ টাকা, ৬০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা এবং ১ থেকে ১কেজি ৫০০ গ্রাম ২৭০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
নগরীর ৫নং ঘাট এলাকায় অবিস্থিত মৎস অবতরণ কেন্দ্র ও পাইকারি মৎস বাজারের লাকি মৎস্য আড়তের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন,“এছর এখনো পুরোদমে ইলিশ বাজারে আসেনি। তবে আশা করা যাচ্ছে কিছুদিন পরে ব্যাপক মাছের যোগান হবে। তবে মাছের দাম কমাতে হলে সরকারকে জেলেদের সুযোগ সুবিধার বিষয়ে প্রথমে ভাবতে হবে এবং ইলিশের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা দরকার কেননা এই মাছ আমাদের জাতীয় মাছ।”
রূপসা উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম অধিকাংশ সময় রুপসা মৎস আড়ৎ থেকে পুরো মাসের জন্য মাছ ক্রয় করেন, আজ মঙ্গলবার তিনি ৪ কেজি ইলিশ ক্রয় করে পরিবারের মাসিক যোগানের জন্য তিনি বলেন, “আজ ৪ কেজি মাছ কিনে রাখছি পুরো একমাসের জন্য, কেননা কখন জানি হটাৎ করে ঘোষণা আসবে ভারত বা অন্যদেশে রপ্তানির জন্য বেড়েছে ইলিশের দর।”
খুলনা গেজেট/এমএম