Edit Content
খুলনা বাংলাদেশ
বুধবার । ২৩শে জুলাই, ২০২৫ । ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

সাবেক আফগান মন্ত্রী এখন ডেলিভারি ম্যান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সাবেক আফগান মন্ত্রীর ভিনদেশে ডেলিভারি ম্যান হয়ে জীবিকা নির্বাহের খবর প্রকাশের পর থেকে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সাদাতকে। তবে তার কাছে যেকোনো কাজই কাজ।

তিন বছর আগেও মন্ত্রী ছিলেন সায়েদ সাদাত। আফগানিস্তানের যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন টানা দুই বছর। ২০১৮ সালে মন্ত্রিত্ব ছাড়েন স্বেচ্ছায়। এরপর উন্নত ভবিষ্যতের আশায় দেশ ছাড়েন গত বছরের ডিসেম্বরে। সে সাদাত এখন জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিপজিগে ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাইসাইকেলে চড়ে কুরিয়ারের পণ্য বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেন তিনি।

সাবেক আফগান মন্ত্রীর ভিনদেশে ডেলিভারি ম্যান হয়ে জীবিকা নির্বাহের খবর প্রকাশের পর থেকে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সাদাতকে। তবে তার কাছে যেকোনো কাজই কাজ।

৪৯ বছর বয়সী সাদাত বলেন, ‘আমার অপরাধবোধে ভোগার কোনো কারণ নেই।’

ব্রিটিশ-আফগান দ্বৈত নাগরিকত্বধারী সাদাত কমলা রঙের নির্ধারিত পোশাক পরে বাইক নিয়ে প্রতিদিন কাজে বের হন।

ক্ষমতাচ্যুত আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে পদত্যাগ করেছিলেন সাদাত। তিনি বলেন, ‘আমি তো চাই দেশের অন্য রাজনীতিকরাও একই কাজ করুক। মুখ লুকিয়ে না থেকে মানুষের সঙ্গে কাজ করুক তারা।’

দুই সপ্তাহ আগে গনি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। এরপর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আফগানিস্তানে ব্যাপক নৈরাজ্যের খবরের মধ্যেই নতুন করে আলোচনায় আসেন সাবেক মন্ত্রী সাদাত।

এখন তার পরিবারের অন্য সদস্য আর বন্ধুরাও আফগানিস্তান ছাড়তে চান। নিরাপত্তা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো যখন বিশেষ ব্যবস্থায় নিজ নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে, তখন তাদের সঙ্গে ফ্লাইট ধরতে বা অন্য পথে দেশ ছাড়তে মরিয়া লাখো আফগান।

চলতি বছরের শুরু থেকেই জার্মানিতে আফগান আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে শুরু করে। জার্মানির ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজিসের তথ্য অনুযায়ী, আগের তুলনায় এ হার বেড়েছে ১৩০ শতাংশের বেশি।

সাদাতের দ্বৈত নাগরিকত্বের অর্থ হলো তিনি চাইলে যুক্তরাজ্যেও যেতে পারতেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় তার কেটেছেও সেখানেই। কিন্তু তাও ২০২০ সালের শেষ দিকে তিনি জার্মানিতে চলে যান; জেনেশুনেই যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার শেষ সুযোগ হারান। ওই বছরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যায় ব্রিটেন। সাদাত জার্মানিকে বেছে নিয়েছেন এ কারণে যে, সেখানে আরও ভালো ভবিষ্যৎ পাবেন তিনি। জার্মানিতে টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দিতে পারবেন বলেও প্রত্যাশা ছিল সাদাতের। টেলিযোগাযোগ আর তথ্যপ্রযুক্তিতে ডিগ্রিও আছে তার। কিন্তু জার্মান কোনো ডিগ্রি না থাকায় নিজের দুর্দান্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে কয়েক মাসেও কোনো কাজ পাননি সাদাত।

তিনি বলেন, ‘এখানে ভাষাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

এ অবস্থায় চলতি বছরের জুন থেকে জার্মান ভাষা শিক্ষার একটি স্কুলে ভর্তি হন সাদাত। প্রতিদিন চার ঘণ্টার ক্লাস শেষে ছয় ঘণ্টা কাজ করেন ডেলিভারি ম্যান হিসেবে। মূলত খাবার সরবরাহ করা তার কাজ।

সাদাত জানান, প্রথম কয়েক দিন বেশ কঠিন বলে মনে হতো সবকিছু। কিন্তু তার সঙ্গে ভালো লাগাও ছিল।

তিনি বলেন, ‘শহরের ট্রাফিক জ্যামে সাইকেল চালিয়ে সঠিক সময়ে পৌঁছানোও বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আপনি যত বাইরে যাবেন, যত মানুষ দেখবেন, ততই শিখবেন।’

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন