সোমবার । ১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
মানবতাবিরোধী অপরাধ

হাসিনার সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করল প্রসিকিউশন

গেজেট প্রতিবেদন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে সাজা বাড়িয়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করেছে প্রসিকিউশন। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে সাজা বাড়িয়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি হবে। অবকাশকালীন ছুটির পর এটি নিষ্পত্তির জন্য চেম্বার আদালতে যাবে প্রসিকিউশন।

এর আগে গত ২৭ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে গাজী এম এইচ তামীম জানিয়েছিলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের সাজার রায়ের কপি প্রসিকিউশন হাতে পেয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের যে অভিযোগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে তার উস্কানি ও আদেশের পর রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে পুলিশ। এই মামলায় গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

প্রসিকিউশন বলছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল যে অপরাধ করেছেন এতে তাদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত। এর কম সাজায় ন্যায়বিচার হয়নি।

গত ১৭ নভেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এছাড়া রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন আদালত।

ওইদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পরবর্তীতে পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রথম দিকে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। তবে চলতি বছরের ১৬ মার্চ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) এবং ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।

পরবর্তীতে একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে এই তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগগুলো হলো- গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে নির্মূল করার নির্দেশ প্রদান, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পোড়ানোর অভিযোগ। এই পাঁচ অভিযোগে তিন জনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

এর মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের দিন (১০ জুলাই) সাবেক আইজিপি মামুন গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। একপর্যায়ে সাবেক এ আইজিপি এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন। পরবর্তীতে গত ১২ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়। যা শেষ হয় গত ২৩ অক্টোবর। সবশেষ গত ২৭ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার রায় দেন ট্রাইব্যুনাল।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন