৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের ৮ হাজার ৫০১টি পদ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ৪৩তম বিসিএস প্রার্থীদের মধ্যে ৭৭৩ জনের দায়ের করা এক রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে ৪৩তম বিসিএস থেকে ৬৪২ জনকে নন-ক্যাডারের বিভিন্ন পদে নিয়োগের সুপারিশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ না করা পর্যন্ত যত নন-ক্যাডার শূন্যপদ হবে, তার তালিকা করে ৪৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার প্রার্থীদের থেকে নিয়োগের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল।
গত ২৯ জানুয়ারি ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও ক্যাডার পদে সুপারিশ পায়নি এমন ৫০০ জন চাকরিপ্রার্থী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন করেন। রিটে পিএসসি চেয়ারম্যান ছাড়াও জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। পরে রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল ও আদেশ জারি করেন।
তবে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ২০২৫ সালে মে মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রেরিত নন-ক্যাডার পদগুলোর সমন্বয় করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৫০১টি পদে ৪৩ তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীদের মধ্য থেকে সুপারিশ করার জন্য বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে (পিএসসি) নির্দেশ দেয়। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৫০১টি পদের মধ্য থেকে অনেকগুলো পদ প্রত্যাহার করে পরবর্তী ৪৪তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রার্থীদের মধ্য থেকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এই প্রেক্ষাপটে ৪৩তম বিসিএসের রিট আবেদনকারী ৭৭৩ জন নন-ক্যাডার প্রার্থী তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ৮ হাজার ৫০১টি নন-ক্যাডার পদ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য সংরক্ষণ করতে নির্দেশনা চেয়ে আদালতে আবেদন দাখিল করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় রোববার আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। এ সময় তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী নাঈম সরদার ও আশরাফুল করিম সাগর। অন্যদিকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পক্ষে আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান আদালতে শুনানি করেন।
একপর্যায়ে উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক শুনে আদালত আবেদনকারীদের জন্য ৮ হাজার ৫০১টি পদ সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শুরুতে ৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মো. মারুফ হোসেন, মো. হাসান সরদার, মো. ফারুকুল ইসলামসহ ৫০০ জন বাদী হয়ে এই রিট দায়ের করেছিলেন। পরবর্তীতে আরও ২৭৩ জন আবেদনকারী এতে যুক্ত হন।
রিট আবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। প্রিলির পর ওই বিসিএসে সর্বমোট ৯ হাজার ৮৪১ জন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর পিএসসি নন-ক্যাডার পদে চাকরি করতে ইচ্ছুক এমন প্রার্থীদের অনলাইনে পছন্দক্রম আহ্বান করে। এরপর একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিস পদে ২ হাজার ১৬৩ জনকে এবং একসঙ্গে ৬৪২ জনকে বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করে। অথচ, নন ক্যাডার মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। যেটি ‘নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা ২০১০, সংশোধিত ‘বিধিমালা ২০১৪’ এর পরিপন্থি।
আবেদনে আরও বলা হয়, ৪৩তম বিসিএসের সার্কুলারে বলা হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে বঞ্চিত নন-ক্যাডার প্রার্থীদের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা ২০১০, সংশোধিত ‘বিধিমালা ২০১৪’ অনুযায়ী সুপারিশ করা হবে। ওই বিধি অনুযায়ী পিএসসি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আসা পদগুলোকে সংরক্ষণ করবেন এবং পরবর্তী বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীদের ধাপে ধাপে সুপারিশ করবেন। কিন্তু পিএসসি নন-ক্যাডারদের মেধা তালিকা প্রকাশ না করেই সম্পূর্ণ অন্যায় এবং বিধি বহির্ভূতভাবে ৬৪২ জনকে বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করেছে, যা আইনের দৃষ্টিতে অন্যায় এবং যা বাতিল করা আবশ্যক।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, নন-ক্যাডার প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ না করা এবং ফলাফল প্রকাশের আগেই নন-ক্যাডার প্রার্থীদের পছন্দক্রম আহ্বান করা সংশ্লিষ্ট নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে মেধাবী হাজার হাজার উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের বিষয়টি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা পিএসসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। ইতোমধ্যে অনেক চাকরিপ্রার্থীর বয়সসীমা অতিক্রম হওয়ায় তারা অন্য কোনো সরকারি চাকরিতে আবেদনও করতে পারবেন না। ফলে তারা চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে। সম্প্রতি ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত পদ প্রত্যাহার করে ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনি।
খুলনা গেজেট/এএজে

