বছরাধিক সময় পর জনসমক্ষে হাজির হলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। নিউইয়র্কে ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত একজন সাংবাদিকের পারিবারিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি নিজের বেশভুষায়ও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। মাথার আলগা চুল পরিহার করেছেন। রেখেছেন দাড়ি ও গোঁফ। সফেদ সাদা দাঁড়িগোঁফে বা নতুন এই লুকে তাকে অনেকটাই অচেনা লাগছিল বলে বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আওয়ামী লীগের পতনের আগেই তিনি দেশ ত্যাগ করে গোপনে আমেরিকায় বসবাস করছেন। ড. মোমেন কূটনীতির পাশাপাশি বারবার আলোচনায় এসেছেন তার বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে।
আমেরিকার নাগরিক হয়েও তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে একাধিকবার কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছিলেন, আমেরিকা নিজের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করুক, তারপর অন্যদের শিক্ষা দিক। এছাড়া আমেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেন, তাদের নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীও শতকরা ৫০ভাগ ভোট পান না।
২০২৩ সালে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর তার বক্তব্য আরও বিতর্ক তোলেন: ‘আমেরিকার ভিসা না পেলে কেউ মরবে, এমন নয়।’ ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকা নিজ দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে না, অথচ আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়। ’২০২২ সালে সিলেটে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ অন্য দেশের তুলনায় স্বর্গে বাস করছে। এই মন্তব্য জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তোলে।
এছাড়া ভারতের সহযোগিতায় সরকার টিকে থাকার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি আরেকটি বড় রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করেছিলেন। ভারতের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক চরম বিতর্কের জন্ম দেয়। বাংলাদেশি ই-পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ ধারা বাদ দেওয়ার ঘটনায় তিনি প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানান এবং বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’বলে উল্লেখ করেন। ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের মন্তব্যকে তিনি ‘শোভনাচার্য্যবিরোধী’ হিসেবে আখ্যা দেন, যা কূটনৈতিক মহলকে নাড়া দেয়।
অন্যদিকে কোয়াড জোটে যোগদানের প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনরাষ্ট্র, নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নিজেরাই ঠিক করে। বক্তব্যটি সাহসী মনে হলেও এতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্যে জটিলতা দেখা দেয়।
সব মিলিয়ে ড. এ কে আব্দুল মোমেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রিত্ব বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার একাধিক মন্তব্য তাকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে এক বিতর্কিত চরিত্রে পরিণত করেছে।
উল্লেখ্য, ড. মোমেন ২০২৪ সালে গণঅভুত্থানের আগে জুন-জুলাইয়ের দিকে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এরপর তিনি আর বাংলাদেশে ফিরে যাননি।
খুলনা গেজেট/এনএম