মানবতাবিরোধী অপরাধ

হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন ‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান

গেজেট প্রতিবেদন

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিলেন দৈনিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালে এ সাক্ষ্য দেন তিনি।

এছাড়াও ওই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নাম রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুই-একজন সাক্ষী জবানবন্দি দেবেন। এরপরই মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হবে। এদিন ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ১৫ তম দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এদিন ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিতে আসেন। এই মামলায় প্রসিকিউশন ৮১ জন সাক্ষীর তালিকা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছিলো। এদের মধ্যে ৪৫ জনের সাক্ষ্য ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে। আজকে ৪৬ তম সাক্ষী হিসেবে মাহমুদুর রহমান জবানবন্দি দিচ্ছেন।

জবানবন্দিতে মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০১৩ সালে শাপলা গণহত্যার কিছুদিন পূর্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিচার চলছিল। ট্রাইব্যুনাল-১ এর তৎকালীন চেয়ারম্যান ও বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের বিরুদ্ধে স্কাইপ কল এবং ই-মেইলের মাধ্যমে বেলজিয়াম প্রবাসী জিয়াউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বেআইনি যোগাযোগের প্রমাণ প্রকাশিত হয়। ‘আমার দেশ’ ও বৃটিশ পত্রিকা ‘The Economist’ যৌথভাবে এই স্ক্যান্ডাল প্রকাশ করে। যেখানে দেখা যায়, রায় লেখা থেকে শুরু করে বিচারিক মতামত পর্যন্ত বিচারপতি নাসিম বাইরে থেকে ‘পরামর্শ’ নিচ্ছিলেন। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পুরো মামলার রায় পর্যন্ত লিখে দেয়া হচ্ছিল, যা যেকোনো মানদণ্ডে একটি গুরুতর বিচারিক অনিয়ম এবং আইনের পরিপন্থী কাজ।

তিনি বলেন, এই অনিয়মের একটি উদাহরণ এখানে দেয়া যেতে পারে যে, ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও তৎকালীন সরকার পক্ষের আইনজীবী জিহাদ আল মামুনকে স্কাইপ কথোপকথনে বলছিলো যে, বিচার চলাকালে মামুন যেনো মাঝে মাঝেই দাঁড়িয়ে অবজেকশন জানান। তখন বিচারপতি তাকে বসিয়ে দেবেন। ভাষাটা এমন, আপনি দাঁড়াইয়া যাবেন, আমি বসাইয়া দিমু। সবাই মনে করবে আমাদের খাতির নাই’।

তিনি বলেন, এই কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতে বিচারপতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এরপরও এই বিচারপতিকে হাইকোর্ট এবং পরে আপিল বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়, যা বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট এক ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে, যেখানে আমাদের তরুণ প্রজন্ম নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ফ্যাসিবাদের সূচনা হয়েছিল ২০০৮ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে, যখন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ তৎকালীন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে চুক্তি করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে নির্বাচনে বিজয়ী করা। বিনিময়ে জেনারেল মইন চাকরির নিরাপত্তা ও আর্থিক সুবিধাসহ সেফ এক্সিট লাভের নিশ্চয়তা পান যা, প্রণব মুখার্জির ‘The Coalition Years’ বইতেও উল্লেখ আছে। এরপর ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় বিএনপিকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা হয়, যাতে শেখ হাসিনার জয় নিশ্চিত হয়।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহও ছিল পূর্বপরিকল্পিত, যা বাংলাদেশকে করায়ত্ত করার জন্য সংঘটিত হয়েছিল। এখানে আওয়ামী লীগের তৎকালীন এমপি শেখ তাপস জড়িত ছিলেন বলে তথ্য রয়েছে। এই বিদ্রোহে দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরিবারগুলোর ওপর নির্যাতন চলে। কিন্তু তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন কোনো পদক্ষেপ নেননি। বরং শেখ হাসিনার নির্দেশে সেনাবাহিনীকে হস্তক্ষেপ করতে দেয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীর প্রতি শেখ হাসিনার ভয়ঙ্কর ঘৃণা ছিল। ১৯৯৩ সালে ভারতীয় কূটনৈতিক কৃষ্ণণ শ্রীনিবাসনের লেখা বই ‘Jamdani Revolution’-এ উল্লেখ আছে, তিনি যখন ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেন, তখন শেখ হাসিনা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শেখ হাসিনা তাকে অনুরোধ করেছিলেন ভারত যেন প্রচার করে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংসতার জন্য একমাত্র দায়ী বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। গোষ্ঠী স্বার্থে সেনাবাহিনী পাহাড়ে অত্যাচার চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, হাসিনার এই রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যের পরে হতবাক হন ভারতীয় তৎকালীন হাইকমিশনার।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন