ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আজ মঙ্গলবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ৮টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এরপর হবে ফলাফল ঘোষণা। গত কয়েকদিন দেশের প্রথমসারীর গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমজুড়ে রয়েছে এই নির্বাচন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “অরাজনৈতিক হলেও ছাত্রদের এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে দেশের আগামী রাজনীতির গতিপ্রকৃতি। দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট ছাত্র সংগঠনগুলো পৃথক প্যানেলে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সেই হিসেবে দেশে অভ্যুত্থান পরবর্তী অংশগ্রহণ-মূলক প্রথম ভোট হতে যাচ্ছে আজ। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও পরিবেশ সম্পর্কে আগাম কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে ডাকসু থেকে। যার কারণে দেশের সব রাজনৈতিক দল, কূটনীতিক এবং সাধারণ মানুষের চোখও আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।”
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। আর বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম ভোট হয় ১৯২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে। সেই থেকে গত ১০০ বছরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ৩৭ বার। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫৪ বছরে নির্বাচন হয়েছে সবচেয়ে কম, মাত্র সাত বার। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রথম ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হন থেকে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও জিএস নির্বাচিত হন মাহবুব জামান। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে সব সংগঠনের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। একতরফা ওই নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী (বর্তমানে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি) নূরুল হক নুর এবং জিএস নির্বাচিত হন সম্প্রতি নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে গোলাম রাব্বানী।
এ বছর ডাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী সংখ্যা ৪৭১ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। প্রতি হল সংসদে ১৩টি করে ১৮টি হলে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি। এসব পদে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন ১ হাজার ৩৫ জন। আটটি ভোটকেন্দ্রে হবে ভোটগ্রহণ। ভোট দেবেন ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীরা জানান, পৃথক ১১টি প্যানেল অংশ নিলেও মূলত ৪টি প্যানেলকে ঘিরেই আলোচনা চলছে। এর মধ্যে ছাত্রদল সমর্থিত ‘আবিদ-হামিম-মায়েদ’, ছাত্রশিবিরের সাদিক-ফরহাদ-মহিউদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের তৈরি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কাদের-বাকের-আশরেফা এবং স্বতন্ত্র উমামা ফাতেমা ও সাদী প্যানেল।
নির্বাচনের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে গত রবিবার ব্রিফিং করেছেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, “গুজব একটি সামাজিক ব্যাধি। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের গুজব হতে পারে, অমুক প্রার্থী চলে গেছে, অমুক প্রার্থী আরেক জনকে সমর্থন করছে। তাই ছাত্রছাত্রীদের নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।” নকল পরিচয়পত্র বানানো হচ্ছে জানিয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে আমাদের কাছে সংবাদ আসছে। তাদেরকে প্রতিহত করতে পরিচয় নিশ্চিত করে ভোটকেন্দ্রে ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি কেউ ধরা পড়ে, তাকে সরাসরি পুলিশে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
আগের দিন অনেক প্রার্থীর ফেসবুক পেজ ডিজেবল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহ সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ও শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থীসহ কয়েকজন প্রার্থীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সোমবার দুপুরে দিকে ফেসবুকে সার্চ করে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ও সহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী মায়েদের অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে বেলা আড়াইটার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে দেখা গেছে, ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিমের ফেসবুক আইডি সচল রয়েছে। তবে ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ও এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদীর আইডি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল বলছে, ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী সাজ্জাদ হোসাইন খান এবং ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী আরমান হোসেনের ফেসবুক আইডিও অচল করে দেওয়া হয়েছে। বেলা আড়াইটার দিকে ফেসবুক ঘেঁটে তাঁদের আইডি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দুপুরে ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, “আমি আগেও কয়েকবার আপনাদেরকে সতর্ক করেছি যে নির্বাচনের আগের দিন নানা ধরনের সাইবার আক্রমণের প্রস্তুতি আছে। আজকে তারই প্রমাণ মিলল। ঘুম থেকে উঠে যখন বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন দেখতে পেলাম আমার আইডি নাই হয়ে গেছে।”
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদও একই অভিযোগ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের প্যানেলের প্রার্থীদের আইডিগুলোতে ক্রমাগত সাইবার অ্যাটাক করা হচ্ছে। কয়েকজন প্রার্থীর আইডি অলরেডি সাসপেন্ডেড। বেশ কিছু আইডি একটু পরপরই লগআউট হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ সহায়।’
খুলনা গেজেট/এনএম