বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

তাপমাত্রার সঙ্গে বাড়তে পারে গরমের দাপট

গেজেট প্রতিবেদন

ভাদ্রের কাঠফাটা রোদ আর বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যে দেশজুড়ে ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। বেশ কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় টানা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত ২৪ ঘণ্টার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংস্থাটির ৫১টি সেন্টারের ২৬ সেন্টার এলাকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় খুবই সামান্য। এরমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বান্দরবনে ১৬ মিলিমিটার রেকর্ড করা হলেও দেশের অধিকাংশ এলাকায় কোনো বৃষ্টি হয়নি।

অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা ৩৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সীতাকুণ্ডে ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঋতুচক্র অনুযায়ী এখন চলছে শরৎকাল চললেও তাপমাত্রার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং গরমের দাপট যেন গ্রীষ্মের মতো। ভাদ্রের এই তালপাকা গরমে অতিষ্ঠ করে তুলেছে জনজীবন।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হলেও তা খুবই সামান্য। মেঘ-বৃষ্টির এই খেলা চললেও কমছে না গরম। বরং গত দুইদিন থেকে গরমের তীব্রতা আরো বেড়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভাদ্র (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মূলত বর্ষার শেষ অংশ। এ সময় বৃষ্টি কমে এলেও আর্দ্রতা থাকে অনেক বেশি। ফলে ঘাম বেশি হয়, আর গরমও বেশি অনুভূত হয়। তাছাড়া বৃষ্টি কমে যাওয়ার ফলে আকাশ পরিষ্কার থাকে, সূর্যের তাপ সরাসরি মাটিতে পড়ে এবং তা থেকে তাপ বিকিরণ বাড়ে। আবার বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় শরীর ঘাম ঠিকমতো শুকাতে পারে না। এর ফলে গরম বেশি লাগে, ক্লান্তি ও অস্বস্তি বাড়ে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবের কারণে মৌসুমগুলো একটু এলোমেলো হচ্ছে। তাই ভাদ্রেও তীব্র গরম অনুভূত হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, তাপমাত্রা খুব একটা বেশি না হলেও বৃষ্টি কমে গিয়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের বেশি থাকায় দেশজুড়ে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। সহজে তা কমারও কোনো লক্ষণ নেই। এ অবস্থা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৪-৫ দিন দেশজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে গরমের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে।

তিনি আরো বলেন, আগামী ৪-৫ দিন রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রামে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টির কোনো লক্ষণ নেই। সেহেতু এ অবস্থা ৪-৫ দিন অব্যাহত থাকবে। এছাড়া দেশজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে গরমের তীব্রতা আরো বাড়বে।

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকদিন ধরে দেশে বৃষ্টির পরিমাণ কমে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৮০ কিংবা এর বেশি থাকছে। এতে তাপমাত্রা খুব বেশি না হলেও গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। ভ্যাপসা গরম এতোটাই তীব্র যে দিনরাতে ২৪ ঘণ্টায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যেস্ত করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

গুলিস্তানের পান বিক্রেতা সীমা আক্তার বলেন, দিনেরাতে সবসময় গরম বইছে। রাতেও ছেলেমেদের নিয়ে ঠিকমত ঘুমাতে পারছি না। আবার দিনেও রোদের খরতাপে ঠিকমত দোকানদারি করতে পারছি না। সবমিলেই চরম অস্বস্তির মধ্যে রয়েছি।

এই অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে রাজধানী ও তার আশেপাশের এলাকায় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকার এবং কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্ত।

আজ শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সকালের দিকে ঢাকার আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে এবং হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এসময়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরো জানিয়েছে, দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া আজ সকাল ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ। আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল খুবই সামান্য।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য কোনো সতর্কসংকেত নেই। পাশাপাশি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোতেও কোনো ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আগস্ট মাসে দেশের চার বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। বাকি চার বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে আগস্টে বৃষ্টি স্বাভাবিক হয়েছে বটে। তবে তা স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্র ১ শতাংশ বেশি। চলতি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। তবে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সেপ্টেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া আগস্ট মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতির তথ্য বিশ্লেষণে তাতে দেখা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে গত মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৯, ১১ দশমিক ১, ১৬ দশমিক ৫ এবং ১২ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি কম হয়েছে। তবে ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪ দশমিক ৩, সিলেটে ৪৩ দশমিক ৩, রাজশাহীতে ২৫ দশমিক ৮ এবং রংপুরে ৪১ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি বেশি হয়েছে। সার্বিকভাবে ১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি বেশি হয়েছে আগস্টে।

চলতি মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দুই থেকে তিনটি লঘুচাপের সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আবার এ মাসে এক থেকে দুটি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ভারী বৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চল, উত্তর–পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন