হাওরের সুলতান-৪ নামে এক হাউসবোট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকারে মামলা করেছেন ঢাকার এক পর্যটক। এই মামলায় আগামী ছয় আগস্ট সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছেন ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক দেবানন্দ সিনহা। এর আগে গত ২৬ জুলাই ভোক্তা অধিকারে মামলা করেন ঢাকার পর্যটক মাহাবুর আলম সোহাগ।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, হাউসবোটের রুম বুকিং দেওয়ার জন্য চলতি মাসের সাত জুলাই নির্ধারিত নম্বরে (+৮৮০ ১৭৭৫-৮৯৫৩৩২) যোগাযোগ করি। এই নম্বর ব্যবহারকারীর নাম মেহেদি। রাজধানীর মতিঝিলে তাদের অফিস। তিনি হাওরের সুলতান-৪ এর ঢাকার এজেন্ট। তার মাধ্যমেই ২২ ও ২৩ জুলাইয়ের জন্য (এক রাত দুইদিন) একটা এসি কেবিন (২ জনের জন্য মূল্য-২৩ হাজার), একটা নন এসি কেবিন (দুইজনের জন্য মূল-১৭ হাজার) ও একটা নন এসি কেবিন (তিনজনের জন্য মূল্য ২২ হাজার ৫০০ টাকা) বুকিং করি এবং অগ্রিম ৪০ হাজার টাকা তার দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদান করি। মোট ৬২ হাজার ৫০০ টাকা বিল হয়। এরপর মধ্যে দুই হাজার ৫০০ টাকা ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়েছে। কথা ছিল হাউসবোটটি সুনামগঞ্জের শাহেব বাড়ি ঘাট থেকে হাওরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এবং যাত্রা শেষে একই স্থানে নামিয়ে দেবে।
হঠাৎ করে আগের দিন (২১ জুলাই) রাতে জানানো হয়, বোট তাহিরপুরের আনোয়ারপুর থেকে ছাড়বে। সুনামগঞ্জ থেকে আনোয়ারপুরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। সুনামগঞ্জে গাড়ি থেকে নেমে আনোয়ারপুরে যেতে হবে সিএনজিতে। সেখানে বাড়তি খরচ হলেও কিছু টাকা বোট কর্তৃপক্ষ দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মূল প্রতারণা করেছে বোটে উঠার পর। আমি তিনজনের জন্য রুম বুকিং এবং টাকা প্রদান করলেও তারা আমাকে দুইজন থাকার এক বেডের একটা রুম দিয়েছে। যেখানে কোনোভাবেই তিনজন থাকার অবস্থা ছিল না। বার বার সেখানকার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজারকে বিষয়টি বললেও তিনি গুরুত্ব দেন নি। অথচ পাশের রুমই ছিল একটা সিঙ্গেল ও ডাবল বেডের রুম। সেটা আরেকজনকে দিয়েছেন, কিন্তু আমাকে দেন নি। একাধিকবার অনুরোধ করলেও সেখানকার ম্যানেজার সেলিম প্রসঙ্গ এড়িয়ে বাকি টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ঢাকায় তাদের এজেন্ট অফিসকে জানালেও, তারাও এ ব্যাপারে সমাধান দিতে পারেন নি। দুই দিন কষ্ট করে এক বিছানায় তিনজন শেয়ার করে থাকতে হয়েছে। এখানে একজন ভোক্তা হিসেবে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে বোট কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে বোটের ম্যানেজার সেলিম সেখানে আমার প্রাইভেসি নষ্ট করেছে।
বিষয়টি ২৩ জুলাই দুপুরে হাওরের সুলতান-৪ এর এমডি রুহুল আমিনকে (০১৬৭১৮৪৮৩৭৭) মৌখিকভাবে জানিয়েছি। তিনি দেখবেন বলে আর কিছু জানান নি। এছাড়া বোটে যেসব খাওয়া দাওয়ার তালিকা তারা প্রচার করে থাকে, সেগুলোর বেশির ভাগেরই মিল ছিল না।
এবিষয়ে অভিযোগকারী মাহাবুব রহমান সোহাগ বলেন, তিন জনের রুম দেখে বুকিং করেছি। তারাও জানিয়েছে এটি তিন জনের রুম। এসে দেখি একজনের রুম। অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়েছে আমাদের। তাদেরকে বুকিং এবং পুরো টাকা পরিশোধ করে কোম্পানির প্যাডে বারবার রিসিট চাইলেও দেন নি। আমাদের রাত্রিযাপন করার কথা ছিলো শহিদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী) এলাকায়। তারা উল্টোপথে দিনে যাদুকাটা ও শহিদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী) দেখিয়ে রাতে টাঙ্গুয়ার হাওরে ছিলো। এতে ঘুরতে এসে প্রশান্তির চেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেক।
হাওরের সুলতান-৪ এর এমডি রুহুল আমিন বললেন, এমন অভিযোগ পাওয়ার পরেই ঢাকার এজেন্টকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নিম্নমানের খাবার দেবার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
হাউসবোট এসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত আকন্দ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এই মামলার নিষ্পত্তির শুনানীর জন্য আগামী ছয় আগস্ট উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক দেবানন্দ সিনহা।
খুলনা গেজেট/এমএম
