Edit Content
খুলনা বাংলাদেশ
বুধবার । ২৩শে জুলাই, ২০২৫ । ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২

ই-পেপার

Edit Content

স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়া: নাহিদ

গেজেট ডেস্ক

চট্টগ্রাম থেকে ১৯৭১ সালে ‘মেজর জিয়া’ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। রোববার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরে এনসিপির সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

দেশব্যাপী জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে ষোলশহরে দুই নম্বর গেইট মোড়ের বিপ্লব উদ্যানে এ সমাবেশ করা হয়।

নাহিদ বলেন, “আমরা জানি ১৯৭১ সালে এ চট্টগ্রাম থেকে মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা এসেছিল। চট্টগ্রাম আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের দুয়ার।”

তিনি বলেন, “এ চট্টগ্রাম নগরী ও বন্দর দিয়ে আরব বণিকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম এসেছিল। ইসলাম সাম্য ইনসাফ ও মানবতার বার্তা নিয়ে চট্টগ্রাম দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল, বিস্তৃতি লাভ করেছিল। চট্টগ্রামকে বলা হয় ইসলামের প্রবেশদ্বার।”

নাহিদ বলেন, “চট্টগ্রাম বহু সংস্কৃতি, বহু ভাষার নগরী। এ চট্টগ্রামে বহু জাতি, সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির সঙ্গে বাস করে আসছে। বাংলাদেশের একমাত্র কসমোপলিটন নগরী হচ্ছে এ চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন‘ এ চট্টগ্রাম।

‘‘কিন্তু আমরা দেখছি চট্টগ্রামকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নানা পরাশক্তি চট্টগ্রামের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে। আমরা হুশিয়ার করতে চাই, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার অংশ, সার্বভৌমত্বের ভিত্তি। যদি চট্টগ্রামের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকায়, তাহলে সমগ্র বাংলাদেশ একসঙ্গে বিদ্রোহ করবে।”

জুলাই গণ-অভুত্থ্যানে চট্টগ্রাম ঢাকার পর দ্বিতীয় দুর্গ হিসেবে গড়ে উঠেছিল মন্তব্য করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “চট্টগ্রাম ফ্যাসিস্টদের তাড়িয়েছিল। নতুন করে কেউ ফ্যাসিস্ট হতে চাইলেও চট্টগ্রাম প্রতিরোধ করবে।

“আপনারা দেখেছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কক্সবাজারে সত্য উম্মোচন করেছেন। সে সত্য উম্মোচন করায় বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাঁশখালীতে আমাদের সহযোদ্ধার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমরা বলেছি ক্ষমতা নয়, জনতাই আমাদের বৈধতা। আজ চট্টগ্রামের জনগণ প্রমাণ করেছে আমাদের বৈধতা। চট্টগ্রাম যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের পাতায় পাতায় বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করে আসছে। চট্টগ্রাম বিদ্রোহের নগরী “

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ বলেন, “গণ-অভুত্থ্যানে আমরা বলেছিলাম, বাধা দিলে বাধবে লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে। আমরা আজও বলতে চাই, বাধা দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি, তারুণ্যের শক্তি, চট্টগ্রামের শক্তিকে থামানো যাবে না।

‘‘চট্টগ্রামে যে অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা রয়েছে, এখানে পানি ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান করতে চায়। এ ঐতিহাসিক নগরী নানা অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের কারণে, নানা মাফিয়ার কারণে আজ বেহাল।‘‘

চট্টগ্রাম নগরীতে নতুন করে সাজাতে হবে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “নতুন বাংলাদেশে নতুন চট্টগ্রাম দেখতে চাই। চট্টগ্রামের হারানো ইতিহাস, হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করব।

‘‘জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আমরা চট্টগ্রামকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল মনে করি। চট্টগ্রামকে নতুন অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সমুদ্র শক্তিকে বিজয়ী করতে হলে, নৌশক্তিকে শক্তিশালী করতে হলে এ চট্টগ্রামকে শক্তিশালী করতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি চট্টগ্রামকে শক্তিশালী করবে।‘‘

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় স্লোগান দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বলে দিতে চাই, ‘বউত দিন খাইও আর ন খাইও‘। আমরা আর কাউকে খাওয়ার সুযোগ দেব না। আমরা এ চট্টগ্রামকে জনগণের চট্টগ্রাম, নাগরিকের চট্টগ্রাম ঘোষণা করলাম। চট্টগ্রামকে আমরা গুটি কয়েক পরিবারের কাছে ছেড়ে দেব না।”

সমাবেশে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমাদের অতীত প্রজন্ম আমাদের কিছু দিয়ে যায়নি। তারা আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ-কলহ দিয়ে গেছে।

“আমরা যারা নতুন প্রজন্ম আছি, আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে; এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। আপনারা যদি সামনে এগিয়ে আসেন, এ তরুণ প্রজন্ম যদি দায়িত্ব নেয়, আমরা বিশ্বাস করি এ তরুণ প্রজন্মকে রক্ত দিয়ে, লোভ দিয়ে কেনা যায় না। হাসিনা চেষ্টা করেছিল কিন্তু কিনতে পারে নাই।”

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “নতুন বাংলাদেশ হবে ক্ষমতার ভারসাম্য, বিকেন্দ্রীকরণ ও জবাবদিহিতার বাংলাদেশ। নতুন বাংলাদেশে আমরা লুটপাটের রাজনীতি দেখতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষকে রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভাট ,বিল্ডিং দেখিয়ে এ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

‘‘১০ হাজার টাকা প্রজেক্ট কোন ফাঁকে ৫০ হাজার টাকার হয়ে যায়, বাংলাদেশের মানুষ তার জবাব চায়। আমরা যে বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই, সে দেশে যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প, সেটা যত ছোটই হোক, প্রতিটি টাকার হিসাব জনগণের কাছে খোলাসা করতে হবে।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সরওয়ার ও জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম।

সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বিকালে এনসিপি নেতাকর্মীরা নগরীর বহদ্দারহাট মোড় থেকে পদযাত্রা নিয়ে ষোলশহরে দুই নম্বর গেইটে আসেন।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন