খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  হাইকোর্টে ২৩ জনকে অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ, আজ শপথ

মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হলেও করোনাযুদ্ধে হেরে গেলেন জহুরুল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঐতিহাসিক কপিলমুনি যুদ্ধে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে প্রথম গুলিটি করে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেন জহুরুল হক বড় খোকা। সেদিনের পঁচিশ বছর বয়সী যুবক পঞ্চাশ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হন। পঁচাত্তর বছর বয়সে এসে আজ করোনা যুদ্ধে হেরে যান। বিদায় নিয়েছেন। টুটপাড়া কবরখানায় চিরনিদ্রায়।

কপিলমুনি যুদ্ধে অধিনায়ক লেঃ গাজী রহমতুল্লাহ দাদু বীরপ্রতীক ও মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার স ম বাবর আলী নির্দেশনা ছিল জহুরুল হক প্রথম গুলি করে এ যুদ্ধের সূচনা করবে। অন্যান্য যোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প লক্ষ করে পজেশন নেয়। সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার মোঃ আবু জাফরের বর্ণনা মতে, সাত ডিসেম্বর প্রত্যুষে রিকয়ার লেস গান-আরসিএল দিয়ে জহুরুল হক প্রথম গুলি করে এ যুদ্ধের সূচনা করেন। পরের দিন প্রতিপক্ষের গুলিতে তিনি আহত হন। ভারতের ব্যারাকপুর সেনানিবাস হাসপাতালে দেড়মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে শয্যায় শুয়ে আকাশবানী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পনের খবর পান।

এর আগে পাইকগাছা ও চালনা বন্দর যুদ্ধে অংশ নেন। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণার পর ২৭ মার্চ সকালে মার্ক ফোর রাইফেল দিয়ে সার্কিট হাউসে অবস্থানরত পাক সেনাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে বীরত্বের পরিচয় দেন। নয় মাসের যুদ্ধে গৌরব বহন করলেও রাজাকারদের গুলির ক্ষত বয়ে বেড়িয়েছেন পঞ্চাশ বছর। যুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন গাজী রহমতুল্লাহ দাদু বীর প্রতীক ও আহসান উল্লাহ। মুর্শিদাবাদের পলাশী নৌ-কমান্ডের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুদ্ধাহত গেজেট নং- ১৩৬১৭। সহযোদ্ধারা হচ্ছেন মোঃ আবু জাফর, ইস্কান্দার কবির বাচ্চু, জোয়াদুর রসুল বাবু, আমিনুর রহমান খসরু, মহাসিন আলী, শামসুল আলম হীরাসহ অন্যান্যরা।

তিনি হাজী মহসিন রোডের ২২নং হোল্ডিং এর অধিবাসী। মরহুম ছলিম উদ্দিন ফকির তার পিতা এবং আয়মনা বিবি তার মা। জম্মেছেন ১৯৪৬ সালের ৫ জানুয়ারি। সাবেক মেয়র ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি তার ভাই। সোমবার সকাল আনুমানিক সাড়ে নয়টা নাগাদ করোনার আলামত দেখা দিয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। তিনি সিরাজুল হক সুজন, আশিকুল হক সৈকত, লাবনী আক্তার ও রিংকি আক্তার নামের সন্তান রেখে গেছেন।

আজ সোমবার (২৮ জুন) বাদ আছর আলিয়া মাদরাসা জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ যাকারিয়া ইমামতি করেন।

তার আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। মুক্তিযোদ্ধার মরদেহে জাতীয় পতাকা দিয়ে আচ্ছাদিত করেন। এ সময় নগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাবেক মেয়র মোঃ মনিরুজ্জামান মনি, জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, নগর বিএনপির উপদেষ্টা জাফরুল্লাহ খান সাচ্চু ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ আবু জাফর, অধ্যাপক আলমগীর কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার বাদ জুম্মা আবুখান লেন জামে মসজিদে তার কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!