দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বপ্নের ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। সেতুর উভয়প্রান্তে প্রতিদিন দেড় শতাধিক দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিক কাজ করছে।
সেতুর পূর্বপাশে দিঘলিয়ার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাবের সামনে ঈদগাহের ভেতর পুরোদমে চলছে ২৫ নং পিলারের টেষ্ট পাইলিং এর কাজ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সেতুর পশ্চিমপাশে রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাউজ লিঃ এর বাউন্ডারির মধ্যে ভৈরব নদীর তীর সংলগ্ন সরকারী খাস জমির উপর ১৩ এবং ১৪ নং পিলারের টেষ্ট পাইলিং এর কাজ শুরু হবে। এ লক্ষে এ প্রান্তে অত্যাধুনিক দ্রুত গতি সম্পন্ন ক্রেন স্থাপন করা হয়েছে। রড, সিমেন্ট, পাথর, বালিসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট মজুত করা হয়েছে। দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বেজ ক্যাম্প প্লাস স্টক ইয়ার্ডে ২ কোটি টাকা ব্যায়ে কংক্রিট ঢালাই প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ৪০ টি সার্ভিস পাইলের কাজ এবং ৩ টা পাইল ক্যাম্পের কাজ সম্পন্ন হবে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) সেতু নির্মাণ কাজে প্রায় ১ শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। উপরোক্ত তথ্যগুলো জানিয়েছন ভৈরব সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসীত কুমার অধিকারী।
গত ২৪ মে ২৫ নং পিলারের টেস্ট পাইলিং এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং বহু আকাঙ্খিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। ঐদিন সেতুর পূর্বপাশ দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব সংলগ্ন ঈদগাহের ভেতর ২৫ নম্বর পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ভৈরব সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ)। সেই থেকে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ২৫ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ঈদগাহের ভেতর বাকি অংশের ২৪ নম্বর পিলারের টেস্ট পাইলিং এর কাজ শুরু হবে।
সওজ সূত্রে জানা যায়, ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০ টি। এরমধ্যে নদীর পশ্চিমপাশ অর্থাৎ নগরীর কুলিবাগান থেকে রেলিগেট ফেরিঘাট সংলগ্ন নদীর তীর পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিলার বসবে। এই অংশের প্রথম পিলারটি বসবে নাগরীর কুলিবাগান আকাঙ্খা পাট গোডাউনের কর্ণারে। ৫ এবং ৬ নং পিলারের মাঝখান দিয়ে রেললাইন ক্রস করবে। এরপর ৭ এবং ৮ নং পিলার বসবে। ৯ থেকে ১৩ নং এই ৫ টি পিলার বসবে নগরীর রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাউজ লিঃ এর অভ্যন্তরে। এর ফলে রপ্তানিকারক এ প্রতিষ্ঠানটি ভাঙ্গা পড়বে। ১৭ থেকে ২৮ নং পিলার বসবে ভৈরব নদীর পূর্বপাশ অর্থাৎ দিঘলিয়া উপজেলার নগরঘাট বানিয়াঘাট ফেরী সংলগ্ন মধ্যবর্তী স্থান থেকে উপজেলা সদরের কুকুরমারা পর্যন্ত। পশ্চিম পাশে নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নং পিলার এবং পূর্ব পাশে নদীর পাড় থেকে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নং পিলার বসবে। এছাড়া সেতুর উভয় দিকে সেখান থেকে সেতুর স্লোপ শুরু হবে সেখানে A-1 এবং A-2 দুটি এবাটমেন্ট বসবে। নদীর ভেতর কোন পিলার বসবে না। ১৫ এবং ১৬ নং পিলারের উপর ১০০ মিটার স্টিলের সিটে বসবে নদীর উপর মূল সেতুটি। নেভিগেশনের জন্য যাতে সেতুর নীচ দিয়ে অনায়াসে কার্গো এবং জাহাজ চলাচল করতে পারে সেজন্য মূল ব্রিজের স্নাব বটম জোয়ারের পানি থেকে ৬০ ফুট উঁচু হবে।
ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর। অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করতে হবে।
এদিকে খুলনাবাসীর বহু প্রতীক্ষিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ যখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে তখন দৌলতপুর মহসিন মোড়ের কিছু পাট ব্যবসায়ী সেতুর রুট পরিবর্তের জন্য সম্প্রতি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সূত্র মতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ভৈরব সেতুর রুট পরিবর্তের জন্য রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আদেশ প্রদান করেছেন। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিট দাখিলকারী ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি মোঃ আবদুল্লাহর সংগে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা এখনও রায়ের কপি হাতে পায়নি। পেলে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করবো। বিষয়টি নিয়ে টেলিফোনে জানতে চাইলে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনও অবগত নই। একই জবাব দেন ভৈরব সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসিত কুমার অধিকারী।
বিষয়টি নিয়ে গত রাতে টেলিফোনে কথা হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর সংগে। তিনি এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, উদ্বেগের কিছু নেই, নির্দিষ্ট স্থানেই ভৈরব সেতু হবে ইনশাআল্লাহ।”
খুলনা গেজেট/ এস আই