খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

অব্যক্ত হিয়া

রুমা ব্যানার্জী

লকডাউনের পর আবার খুলেছে দোকানপাট। তাই আজ অনেকদিন পরে আবার ক্যাফেটা খুলেছি। হ্যাঁ ক্যাফে, আমি এই ছোট্ট ক্যাফের মালিক। একটা সময় এখানে ভিড় জমে থাকত। কলেজের ছেলে মেয়ে, অফিস ফেরত বন্ধুরা, দুপুরে একটু আড়াল খোঁজা প্রেমিক যুগল। এখন অবশ্য সেটা ইতিহাস।
কাঁচের দরজা ঠেলে, মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে ঢুকলো একটি নারী মূর্তি । মাঝারি চেহারা। পরনে সাদা শাড়ী, লম্বা বেনী , কাঁধে একটা শান্তিনিকেতনী ব্যাগ। চলার ধরনটা বড্ড পরিচিত, যেন বহু জন্মের পরিচয় ওই চলার ভঙ্গির সঙ্গে। তার থেকেও বেশি পরিচিত ওই পারফিউমের গন্ধটা । বুকটা ধড়াস করে উঠল।
চেয়ার টেনে, ধুলো আছে কিনা দেখে নিয়ে বসল মেয়েটি, হ্যাঁ ঠিকই ধরেছি, ওই তো অধিশ্রী। এই ক’বছরে তেমন পাল্টায়নি, শুধু এখন আরো বেশি আকর্ষণীয়া হয়ে উঠেছে।

পাছে আমাকে দেখতে পায় তাই মুখের সামনে মেনু কার্ডটা তুলে ধরলাম। নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা। কিন্তু শ্রী কে দেখার লোভটা সংবরণ করতে না পেরে বইটা নামাতেই দেখি সে আমার দিকেই তাকিয়ে।

একটু ইতিস্ত করে হাত নাড়লো, হাই, কিংশুক না? বাধ্য হয়ে কার্ডটা সরিয়ে বললাম, ——-হাই, চিনতে পেরেছিস!
——আরে ইয়ার, এতগুলো বছর একসঙ্গে পড়লাম, আর চিনব না? কি ভাবিস?
কি করব বুঝতে না পেরে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম টেবিলের দিকে।
—— কি খবর তোর?
—- চলছে রে। তোর বিয়ে শুনেছিলাম, হয়ে গেছে?
—– না রে সেই ব্যাপারেই বেড়িয়েছি। ও আসবে তাই এখানে।
তা কি করছিস এখন? এখনো লিখিস?
—– ওই আর কি। কলেজ শেষ হবার পরও তেমন সুবিধার কাজ টাজ পাচ্ছিলাম না যেখানে কিছুটা রোজগার করবো, কিছুটা নিজের শখ মেটাবো। দশটা পাঁচটা ডিউটি, তার ওপর যাওয়া আসায় দু’তিন ঘণ্টা, সব করে তারপর আর কলম চলছিল না, রে। অথচ লিখতে না পারলে নিশ্বাস নিতে পড়তাম না।

—– তাই তো। কি ভালো লিখতিস তুই। ঐনদ্রিলা, নাজমা, শ্রীতমা তোর লেখার জন্য পাগল ছিল। শেষ অবধি যে কে যে তোর গার্ল ফ্রেন্ড হলো জানি না। আমাদের ব্যাচে কেউ? না জুনিয়র?
— ধুস ওসব কেউ না। আমার কেউ ছিল না। আজও নেই।
—– তা হয় নাকি? তোর কবিতা জুড়ে শুধুই সেই হলুদ ফুল। তোর সেই হলুদ ফুলটা কে বলতো। কলেজ শেষ তাই এখন আর হলুদ ফুলকে লুকিয়ে রাখিস না। বলে দে বস্।
—– তোকে না বলার কিছু নেই। ছিল একজন। তার কোন বিশেষত্ব ছিল না কিন্তু সব মিলিয়ে ছিল মোহময়ী। তার ঘাড় বেঁকিয়ে কথা বলা, চোখ তুলে তাকানো, উচ্ছ্বল হাসি, সব আমাকে আকৃষ্ট করত। কখনো চোখা চোখি হলে চোখ সরিয়ে নিতাম।ভীষণ ভালবেসেছিলাম। হয়তো এখনো বাসি । বলা হয়ে ওঠেনি, বা বলতে পারিস বলতে চাইনি। তাই, আজো তাকে ভেবেই লিখে চলেছি।
—– তুই কি রে? বলিস নি কেন? কি হত বড় জোর তোকে প্রত্যাখ্যান করত। কিন্তু এই যন্ত্রনা তো থাকতো না।
—– ভয়ে বলিনি
—–দূর বাবা, কি হত অ্যাট দ্যা মোস্ট, একটা থাপ্পর মারতো….
——না মারত না, হয়তো হ্যাঁ বলে দিত। আার সেটাই ছিল ভয়। তখন আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না। নানা ব্যাপারে ঘেঁটে ছিলাম। ওকে কোন দ্বিধায় জড়াতে চাইনি। চাইনি ওর জীবনে আসুক অনিশ্চয়তা।
—–তা এখন বলে দে, এখনতো তুই সেটেল্ড।
—— তা আর হয় না, সে অন্য একজনকে ভালবাসে। বলে তার মনে দ্বন্দ সৃষ্টি করতে চাই না। তুই এলি তাই, নাহলে খালি ক্যাফেতে একা একাই সময় কাটাতাম, সঙ্গী ছিল কাগজ আর কলম, আর সেই হলুদ ফুল।
তুই বোস, তোর জন্য কফি বলছি, অন দ্যা হাউস। এখনও ক্যারামেল ক্রিম ক্যাপাচিনো উইথ এক্সট্রা ক্রিম আর চকো চিপস্ খাস তো? নাকি বদলেছে….
—– তোর মনে আছে?
—–বুঝতে না চাইলে যমন বোঝা যায় না, ভুলতে না চাইলে তেমনই ভোলা যায় না।

খুলনা গেজেট/ টি আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!