সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো ভৈরব সেতুর কর্মযজ্ঞ। ২৫ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের মধ্যদিয়ে আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং বহু আকাঙ্খিত ভৈরব সেতুর কর্মযজ্ঞ।
২৪ মে সোমবার দুপুর সোয়া ১২ টায় সেতুর পূর্ব সাইড দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব সংলগ্ন ঈদগায়ের মধ্যে ২৫ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ভৈরব সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাশন লিঃ (করিম গ্রুপ)। টেষ্ট পাইলিং কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ, উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী সড়ক বিভাগ-২ মোঃ বেলায়েত হোসেন, উপ- সহকারী প্রকৌশলী সড়ক বিভাগ- ২ মোঃ রাশিদুর রেজা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) এর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসিত কুমার হালদার, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এর প্রতিনিধি মাহাফুজা শাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডঃ মসিউর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এম এ রিয়াজ কচি ও মোঃ হাফিজুর রহমান, স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি সৈয়দ জামিল মোর্শেদ মাসুম, সাংবাদিক শেখ রবিউল ইসলাম রাজিব ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। এর আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কয়েক দফা প্রস্তুতি নিয়েও ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ার কারণে টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শুরু করতে পারেনি।
২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘ভৈরব সেতু’ নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর পূর্ব সাইড দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে অফিস বেজ ক্যাম্প প্লাস স্টক ইয়ার্ড তৈরী করে সেতুর ইকুইপমেন্ট স্টক করতে শুরু করে। কিন্ত জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র, কেডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং সেতুর এলাইমেন্ট (লে আউট) না পাওয়ার কারণে কার্যাদেশ পাওয়ার পরও সেতুর তৈরীর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৬ মাস অপেক্ষা করতে হয়। ইতিমধ্যে উপরোক্ত সকল দপ্তরের (এনওসি) ছাড়পত্র মিলেছে। বাকী রয়েছে শুধু জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র যা খুলনা জেলা প্রশাসকের (এল এ) শাখায় প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন এবং কাজের অগ্রগতির স্বার্থে আজ ২৪ মে (সোমবার) দিঘলিয়ার দেয়াড়া ঈদগাহের সরকারি খাস জমির উপর ২৫ নং পিলারের টেষ্ট পাইলিং এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এবং আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ভৈরব সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ । গত ২১ মে সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) এর প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব সেতুর এলাকা পরিদর্শনে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করার নির্দেশনা প্রদান করেন। এরপর সেতুর পূর্ব সাইড নগরীর রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাইজ লিঃ এর অভ্যন্তরে ১৩ এবং ১৪ নং পিলারের টেষ্ট পাইলিং এর কাজ শুরু হবে।
সওজ সূত্রে জানা যায়, ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০ টি। এর মধ্যে নদীর পশ্চিম সাইড অর্থাৎ নগরীর কুলি বাগান থেকে রেলিগেট ফেরিঘাট পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিলার বসবে। এই অংশের প্রথম পিলারটি বসবে নগরীর কুলিবাগান আকাঙ্ক্ষা পাট গোডাউনের কর্নারে। ৫ এবং ৬ নং পিলারের মাঝখান দিয়ে রেল লাইন ক্রস করবে। এরপর পর্যায়ক্রমে ৭ এবং ৮ নং পিলার বসবে। ৯ থেকে ১৩ নং এই ৫ টি পিলার বসবে নগরীর রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাউজ লিঃ এর অভ্যন্তরে। এর ফলে রপ্তানিকারক এ প্রতিষ্ঠানটি ভাঙ্গা পড়বে। ১৭ থেকে ২৮ নং পিলার বসবে ভৈরব নদীর পূর্ব সাইড অর্থাৎ দিঘলিয়া উপজেলার নগর ঘাট এবং বানিয়াঘাট ফেরিঘাটসংলগ্ন মধ্যবর্তী স্থান থেকে উপজেলা সদরের কাছে কুকুরমারা পর্যন্ত। পশ্চিম পাশের নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভীতরে ১৫ নং পিলার এবং পূর্ব পাশে নদীর পাড় থেকে ১৮ মিটার ভীতরে ১৬ নং পিলার বসবে। এছাড়া নদীর উভয় দিকে যেখান থেকে সেতুর স্লোপ শুরু হবে সেখানে A-1 এবং A-2 দুটি এবাটমেন্ট বসবে। নদীর ভেতর কোন পিলার বসবে না। ১৫ এবং ১৬ নং পিলারের উপর ১০০ মিটার স্টিলের সিটে বসবে নদীর উপর মূল সেতুটি। নেভিগেশনের জন্য সেতু দিয়ে যাতে অনায়াসে কার্গো এবং জাহাজ চলাচল করতে পারে সেজন্য মূল ব্রীজের স্নাব বটম জোয়ারের পানি থেকে ৬০ ফুট উঁচু হবে। কুকুরমারা থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত ৩৩ ফুট চওড়া অ্যাপ্রোচ রোড হবে। এছাড়া খুলনা যশোর রোড থেকে ব্রীজে ওঠার জন্য নগরীর মহসিন মোড়ে একটি ইন্টারসেকশন বা (জংশন) তৈরি করা হবে।
ভৈরব সেতু প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে দিঘলিয়া (রেলিগেট) আড়ুয়া- গাজিরহাট তেরখাদা সড়কের (জেড ৭০৪০) ১ম কিলোমিটার ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর। অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। দিঘলিয়া, মহেশ্বরপাশা এবং দেবনগর মৌজার ১৭ দশমিক ৪৯ একর ৭ দশমিক ০৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা সেতু সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতু তৈরীর কাজ শেষ না হলেও কোন সমস্যা নেই। সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হবে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসীত কুমার অধিকারী।
খুলনাবাসীর প্রত্যাশা কোন প্রতিবন্ধকতা কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতি ছাড়াই দ্রুত এবং সফলভাবে বহু প্রতীক্ষিত এবং স্বপ্নের ভৈরব সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
খুলনা গেজেট/কেএম