খুলনায় করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে পারেনি প্রথম ডোজ নেয়া ৬৮ হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে ফুরিয়ে গেছে টিকা । ফলে টিকা দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তারা।
জানা যায়, খুলনায় এক লাখ ৬৮ হাজার মানুষ প্রথম ডোজের টিকা নেন। এরমধ্যে দ্বিতীয় ডোজে এক লক্ষ মানুষ টিকা গ্রহণ করে। এরপর টিকা শেষ হয়ে যায়। ফলে বাকি ৬৮ হাজার মানুষ কবে টিকা নিতে পারবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার তিন মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়া যাবে কিন্তু তখন দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে না পারলে কী হবে ? এ নিয়ে চিন্তিত খোদ স্বাস্থ্য বিভাগই।
খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, খুলনায় টিকার প্রায় ৬৮ হাজার দ্বিতীয় ডোজ ঘাটতি রয়েছে।
বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) রাশেদা সুলতানা বলেন, টিকা না আসা পর্যন্ত কোন কিছু বলা যাচ্ছে না। টিকা আসলে নতুন নির্দেশনা আসবে, এরপরে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। তবে যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন তারা অন্য টিকাও গ্রহণ করতে পারবেন।
খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘টিকা সংকট সারাদেশের। নতুন টিকা আসলে নতুনভাবে নির্দেশনা আসবে । সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেবো।’
এদিকে বাংলাদেশে টিকার মজুদ ফুরিয়ে আসায় এবং এখন পর্যন্ত নতুন টিকার চালান এসে না পৌঁছায় খুলনার ন্যায় প্রথম ডোজ পাওয়া অনেক মানুষই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন দ্বিতীয় ডোজ যথাসময়ে পাবেন কি না, কিংবা আদৌ পাবেন কি না।
শনিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকের দ্বিতীয় ডোজের নির্ধারিত তারিখ থাকার পরেও তারা টিকা নেয়ার এসএমএস পাননি। ফলে তারা টিকা নিতে পারেননি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৪ জন, আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৮২৪ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত টিকা দেয়া হয়েছে ৯১ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৮ ডোজ।
ভারত থেকে কেনা এবং উপহার হিসাবে পাওয়া মিলিয়ে দেশে টিকা রয়েছে এক কোটি ২ লাখ ডোজ। অর্থাৎ সরকারের হাতে এখন রয়েছে মাত্র ১১ লাখ ডোজের মতো টিকা রয়েছে।
প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন, কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাননি এরকম মানুষ রয়েছেন ২৫ লাখ ৬ হাজার ৩০ জন। অর্থাৎ ১৩ লাখের বেশি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় দ্বিতীয় ডোজের টিকাই এই মুহূর্তে সরকারের হাতে নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সৌমিয়া সোয়ামিনাথান গণমাধ্যমকে বলছেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হচ্ছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ১২ সপ্তাহ (তিনমাস) পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধির উদাহরণ রয়েছে। এর ফলে আরও বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় বলে বলা হচ্ছে।”
তিনি বলছেন, “এ ধরনের টিকার ক্ষেত্রে দুইটি ডোজ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে যদি কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ দেরিও হয়, তারপরেও দ্বিতীয় ডোজ নেয়া দরকার। কারণ প্রথম ডোজে আসলে নতুন অ্যান্টিজেন শরীরের ভেতর প্রবেশ করে, দ্বিতীয় ডোজের মাধ্যমে সেটার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়া হয়।”
বিশ্বের অনেক দেশেই প্রথম টিকা নেয়ার পরবর্তী ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার কথা বলা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে অন্যতম মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেছেন, “অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজের পর ১২ সপ্তাহ, এমনকি তারপরেও দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যেতে পারে। ফলে দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেছেন, “দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পর যারা বাকি থাকবেন, তাদের কবে টিকা দেয়া যাবে, সেটা নির্ভর করবে টিকা হাতে পাওয়ার ওপরে। আমরা আশা করছি, তাদের টিকার কার্যকারিতা সময়ের মধ্যে টিকা আসবে।”
যারা কোভিশিল্ড নিয়েছেন, তারা কি অন্য টিকা নিতে পারবেন? ড. সৌমিয়া সোয়ামিনাথান বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানও পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন বিশ্বে যেসব ট্রায়াল চলছে, সেখানে দুই ধরনের দুইটি টিকা নেয়ার পরীক্ষাও করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত দুই কোম্পানির দুই ডোজ টিকা নেয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হাতে নেই। তবে এখন পর্যন্ত এটাই সুপারিশ করা হচ্ছে যে, যারা প্রথম ডোজ যে টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজও সেটা নেবেন।
দুই কোম্পানির দুইটি আলাদা ডোজ নেয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক কমিটি।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলছেন, “বিশেষজ্ঞ কমিটি এক টিকার সঙ্গে অন্য টিকা নেয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। ফলে যারা কোভিশিল্ড পেয়েছেন, তারা সেটাই পাবেন।”
খুলনা গেজেট/ এস আই