খুলনায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। তিন মাসের তুলনায় চলতি মাসের মাত্র ১০ দিনে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। খুলনায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হলেও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে অনেকে বাজারে-মার্কেটে চলাফেরা ও কেনাকাটা করছেন।
সোমবার (১২ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খুলনা নগরীতে ছিল তীব্র যানজট। ভিড় ছিল ব্যাংকগুলোতেও। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে লোকজনকে টাকা উত্তোলন করতে দেখা গেছে।
এরই মধ্যে সোমবার চলাচলে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এক সপ্তাহ দেশের সব অফিস-আদালত, শপিংমল, দোকানপাট, হাটবাজার বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সব ধরনের পরিবহন চলাচল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
দুপুরে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন স্থান, বাজার, মার্কেট ঘুরে জনসমাগম ও যানজট দেখা গেছে। নগরীর খানজাহান আলী রোড, পিকচার প্যালেস মোড়, ডাকবাংলা মোড়, পাওয়ার হাউস, ফেরিঘাট মোড় থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত, সদর থানা মোড়, কেডি ঘোষ রোড, বড় বাজারসহ বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট ছিল। এতে প্রচণ্ড গরমে যানবাহনে চলাচলরত যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠে যায়। ফুটপাতের পাশাপাশি বাজার ও মার্কেটে মানুষের ভিড় ছিল। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাওয়া বিক্রেতাদের যেন সময় নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার। অনেকে মাস্ক পরলেও সেটি রয়েছে থুতনির নিচে। আবার অনেকের মুখে মাস্ক নেই।
ডাকবাংলা এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. মুরাদ হোসেন বলেন, চাকরির কারণে অফিসে আসতে হয়েছে। তবে সড়কে যানজট আর মানুষের ভিড় দেখে মনে হচ্ছে না যে করোনাভাইরাস নিয়ে তাদের মধ্যে সচেতনতা রয়েছে।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. সাদিয়া মনোয়ারা উষার দেওয়া তথ্যমতে, গত তিন মাসের ব্যবধানে এপ্রিলের ১০ দিনে খুলনায় করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। জানুয়ারি মাসে করোনা পজিটিভ রোগী ছিল ১৮২ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৬২ জন। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনজন। ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা পজিটিভ রোগী ছিল ৯৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৫ জন। আর মারা গেছেন একজন। মার্চ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২৪০ জনে দাঁড়ায়। আর সুস্থ হন ১১৯ জন। চলতি মাসের ১০ দিনে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়। মাত্র ১০ দিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪১১ জন। আর মারা গেছেন আটজন। তবে সুস্থ হয়েছেন ৭৫ জন।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মুহূর্তে মানুষের সচেতনতা জরুরি। মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
এদিকে খুলনায় করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজের পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজও। রোববার (১১ এপ্রিল) পর্যন্ত খুলনায় মোট এক লাখ ৬৯ হাজার ২৫৭ জন করোনার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৩৪৫ জন এবং নারী ৬৮ হাজার ৯১২ জন।
অপরদিকে খুলনার ৯ হাজার ৪৮৬ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৮৮৭ এবং নারী ২ হাজার ৫৯৯ জন।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি