আইপিএল খেলতে ছুটি চেয়েছিলেন সাকিব, ওই সময় সেটা মঞ্জুরের কথাও জানিয়েছিল বিসিবি। তবে এই সিদ্ধান্ত আবার পুনরায় বিবেচনার কথা জানিয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান আকরাম খান।
আজ রোববার পাপনের বাসায় বৈঠকের পর আকরাম বলেন, ‘আজকে আমাদের মূলত মিটিং ছিল টিম নিউজিল্যান্ডে। এসব ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটাও চিন্তা করেছি যাতে আমাদের এটা কোনো এফেক্ট না ফেলে টিমের ওপর। অনেক কথার মধ্যে একটা ছিল আমি নাকি চিঠি পড়িনি। বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে আইপিএলের এনওসির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো। ও যদি টেস্ট খেলতে চায় তাহলে খেলবে। আমরা ওর এনওসির ব্যাপারে চিন্তা করব।’
সাকিবের চিঠি প্রসঙ্গে আকরাম বলেন, ‘সাকিব যেটা আমাদের বলেছে, শ্রীলঙ্কায় আমরা যে সিরিজটা খেলতে যাচ্ছি সে সিরিজটা না খেলে সে আইপিএল খেলতে চায়। শ্রীলঙ্কায় আমরা কি খেলতে যাবো সেটা আপনারাও জানেন, আমরাও জানি, সবাই জানে। এখন যেহেতু সে নিজের মুখে বলেছে সে টেস্ট খেলতে চায়…।’
ফেসবুক লাইভে এসে সাকিব অভিযোগ করেছিলেন তার পাঠানো চিঠি পড়েননি খোদ ক্রিকেট অপরাশেন্স চেয়ারম্যান। এই নিয়ে স্পষ্টই ক্ষোভ দেখা গেছে আকরাম খানের মধ্যে। দুয়েকদিনের মধ্যেই সাকিবের এনওসি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আকরাম বলেন, ‘যেহেতু বলেছে ও যে চিঠি দিয়েছে আমি চিঠিটা পড়িনি। তো ঠিক আছে, যেহেতু চিঠিটার ভুল বুঝেছি আমি, আর ও যেহেতু টেস্ট খেলতে চাচ্ছে, সেহেতু বোর্ডের সবার সাথে আলাপ-আলোচনা করে কাল, পরশু মধ্যে ওর এনওসির ব্যাপারে আবার আলোচনা করব। ও শ্রীলঙ্কা যাবে টেস্ট খেলবে।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটে হঠাৎই যেন শুরু হয় নতুন নাটক। শনিবার রাতে সাকিব আল হাসানের ফেসবুক লাইভের পর থেকে যার শুরু। যেখানে তিনি ক্রিকেট বোর্ড ও এর কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। এরপর তার ওই সমালোচনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান আকরাম খান।
এই নিয়ে গুলশান-২-এ আইভি কনকর্ড টাওয়ারে পাপনের বাসায় বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা। জরুরি এই বৈঠকে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন, ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান আকরাম খান ও বোর্ডের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে আকরাম খান একথা জানান।
আইপিএলে খেলতে সাকিবের শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ছুটি চাওয়াতেই ঝামেলার শুরু। ওই সময় ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন বোর্ড সভাপতি পাপনও। তবে ফেসবুক লাইভে সাকিব জানিয়েছেন, টেস্ট খেলতে চান না এমন কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
সাকিব বলেন, ‘বারবার শুধু কথা হচ্ছে, আমি টেস্ট খেলতে চাই না। আমি নিশ্চিত, বিসিবিকে আমি যখন চিঠি দিয়েছি, যারাই বলছে যে, আমি টেস্ট খেলতে চাই না বা টেস্ট খেলব না, তারা চিঠিটা পড়েনি। এটা হচ্ছে একদম বড় কথা। আমি আমার চিঠিতে কোথাও উল্লেখ করিনি যে, আমি টেস্ট খেলতে চাই না। আমি শুধু উল্লেখ করেছি, আমি বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য এই সময়টাতে আইপিএল খেলতে চাই। এটাই বলেছি।’
এক ঘণ্টার এই ফেসবুক লাইভে এসে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। কথা বলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা ব্যবস্থা নিয়েও। প্রশ্ন তুলেছেন, বোর্ড কর্মকর্তাদের ভূমিকা ও পাইপলাইন নিয়ে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও খালেদ মাহমুদ সুজন ছাড়া বোর্ডে কাজ করার মতো মানুষ দেখছেন না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে সাকিব বলেন, ‘ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগ জাতীয় দল নিয়ে কী কাজ করেছে, কী পরিকল্পনা করছে? তাদের ব্যর্থতা বা সাফল্য কী? আকরাম ভাই তো অনেক সাহসী মানুষ, এর আগে উনি পদত্যাগও করেছেন। এখন ব্যর্থতার দায় তো তাঁর ওপরও পড়ে, নাকি?’
যদিও বর্তমান সভাপতি পাপনের ভূমিকাকে উল্লেখ করে সাকিব যোগ করেন, ‘আমরা সবসময় পাপন ভাইকে দোষ দেই। পাপন ভাই আমার কাছে মনে হয় যত বেশি চিন্তা করে, এতো বেশি চিন্তা খুব কম মানুষই আছে ক্রিকেট বোর্ডে করে। সুজন ভাইও করে। তার ফলটাও আমরা দেখতে পাচ্ছি। যুবদল ভালো করছে। আমি জানি না, আসলে খুব বেশি একটা কারও সংযুক্তি আছে বলে মনে করি না। এই দুজন ছাড়া ক্রেডিট দেওয়ার মানুষ তো দেখি না, যারা আসলে ক্রিকেটটা নিয়ে ভাবছে।’
আকরাম খান সম্পর্কে বলেছে, ভাই গতকালও সম্ভবত কোথাও বলেছে যে আমি টেস্ট খেলতে চাই না। আমার ধারণা তিনি চিঠিটা ঠিকভাবে পড়েনইনি। বারবার তিনি বলছেন, আমি টেস্ট খেলতে চাই না। এটা আমি কোথাও বলিনি।
এরপরই যেন দেশজুড়ে ঝড় ওঠে এই ইস্যুতে। প্রকাশ্যে বোর্ড পরিচালককে নিয়ে এমন মন্তব্যের পর চারদিকে শুরু হয় আলোচনা ও সমালোচনা। সত্যিই কি সাকিব এমন মন্তব্য করতে পারেন? এই বিষয় নিয়ে বিসিবির কেউ এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি।
তবে সাকিব আল হাসানের মন্তব্য নিয়ে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সঙ্গে কথা বলেছেন আকরাম খান। জানিয়েছেন, সাকিবের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবেন বোর্ডের সঙ্গে আলাপের পর। সাকিবের এমন মন্তব্যে যে বোর্ড কর্তারা অসন্তুষ্ট, সেটাও বোঝা গেল স্পষ্ট।
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের প্রধান আকরাম খান বলেন, ‘ব্যাপার তো একটা না। আমরা আলাপ করে তারপর বলব। ওরা এখন ভালো প্লেয়ার তো… আমরা কোনোদিন ক্রিকেট খেলি নাই! আমরা অফিসিয়ালি এটা যত দ্রুত সম্ভব জানাব। বোর্ডের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেব যে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার বলতে পারবে কি না এসব।’
শনিবার দেওয়া সাকিবের ইন্টারভিউ শুনেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আকরাম বলেন, ‘সাকিব কী বলেছে শুনেছি। ইন্টারভিউতেই কিন্তু সে বলছে দুইটা টেস্ট না খেললে কিছু হবে না। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট শেষে আছি। আবার সে বলছে টেস্ট থেকে নাকি ছুটি চায়নি।’
ওই লাইভে বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে আকরামের অবদান প্রসঙ্গে সাকিব বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট অপারেশন্স জাতীয় দল নিয়ে কী কাজ করেছে, কী প্ল্যান করছে? তাদের ব্যর্থতা বা সাফল্য কী? আকরাম ভাই তো অনেক গাটসি (সাহসী) মানুষ, এর আগে উনি পদত্যাগও করেছেন। ব্যর্থতার দায় তো তার ওপরও পড়ে, নাকি?’
অকপট এমন কথা বলে সাকিব যে ফাঁসতে পারেন সেটা স্পষ্ট! খোদ বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন এ নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তেমন গুঞ্জন বিসিবিতে।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি