ধানের পোকামাকড় দমনে খুলনার ৯টি উপজেলার কৃষকদের কাছে আলোক ফাঁদ প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ধানক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে আলোর ফাঁদ পেতে ক্ষতিকর পোকা দমন করাই ‘আলোক ফাঁদ’।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ‘আলোক ফাঁদ’ ধানের পোকা দমনের একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। এ পদ্ধতিতে সন্ধ্যার পর ধানক্ষেত হতে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায় বাঁশের তিনটি খুঁটি ত্রিকোণাকার করে মাটিতে পুঁতে মাথার অংশ একত্রে বেঁধে দিতে হয়। এরপর মাটি থেকে আড়াই থেকে তিন ফুট ওপরে একটি বৈদ্যুতিক বা সৌরশক্তি নিয়ন্ত্রিত বাল্ব জ্বালিয়ে খুঁটির তিন মাথার সংযোগস্থলে রশির সাহায্যে ঝুলিয়ে দিতে হয়। এর নিচে একটি বড় আকারের প্লাস্টিকের গামলা বা পাত্রে ডিটারজেন্ট পাউডার অথবা কেরোসিন মিশ্রিত পানি রাখা হয়। সন্ধ্যার পর মাঠ জুড়ে যখন অন্ধকার নেমে আসতে থাকে তখন আলোক ফাঁদের আলোর ঝলকে আকৃষ্ট হয়ে ধানখেতের বিভিন্ন পোকামাকড় এ পাত্রে চলে আসে। আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নির্ণয়ের পর কীটনাশক প্রয়োগ করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষকের অপ্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার কমছে। এছাড়া ফসল থাকছে অনেকটা বিষমুক্ত।
খুলনার রূপসা উপজেলার ৫নং ঘাটভোগ ইউনিয়ন আলাইপুর গ্রামের কৃষক মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আলোক ফাঁদ’ পেতে ফসলে কী ধরণের পোকার উপস্থিতি বা আক্রমণ ঘটছে তা জানতে এই প্রযুক্তি খুবই কার্যকর।
রূপসা উপজেলার ৩নং নৈহাটি ইউনিয়নের দেবিপুর এলাকার কৃষক রকিবুল ইসলাম বলেন, আমি এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক উপকৃত হয়েছি। পোকামাকড়ের উপস্থিতি চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের কৃষক জামাল শেখ জানান, ধানখেতে আলোক ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে উপকারী ও ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি চিহ্নিত করে ক্ষতিকর পোকা দমন করা সহজ হয়েছে।
রূপসা উপজেলার নিকলাপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লা জানান, ‘আলোক ফাঁদ’ ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকার মধ্যে মাজরা পোকা ও সবুজ পাতা ফড়িং ও উপকারী পোকার মধ্যে ড্যামসেল ফ্লাই ও মাকড়সা উপস্থিতি পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে ধানের উপকারী পোকা সংরক্ষণ এবং ক্ষতিকর পোকা দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ধানের জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপস্থিতি নির্ণয় করতে আলোক ফাঁদের বিকল্প নেই।
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন, ক্ষতিকর পোকামাকড় বিশেষ করে বিপিএইচ বা কারেন্ট পোকা যাতে ধানের ক্ষতি সাধন করতে না পারে সেজন্যই উপজেলার ব্লক গুলোতে ‘আলোক ফাঁদ’ব্যবহার করা হচ্ছে। আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি একটি পরিবেশ বান্ধব ও অর্থ সাশ্রয়ী পদ্ধতি। এতে চাষিরা নিজেরাই ক্ষতিকর ও উপকারী পোকা শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা দুই ধরনের আলোক ফাঁদ ব্যবহার করছি। স্থানীয় বাল্ব বা হেজাক বাতি ব্যবহার করে আলোক ফাঁদ ও সৌরশক্তি নিয়ন্ত্রিত আলোক ফাঁদ। এর মাধ্যমে ক্ষতিকর পোঁকা ও উপকারি পোকার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। যখন ক্ষতিকর পোকার সংখ্যা বেশি থাকে। তখন আমরা কৃষকদের স্প্রে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতি বুধবার জেলার প্রতিটি ব্লকে আলোক ফাঁদের ব্যবস্থা করে থাকি। গত বছর ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। এ বছর প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। একই সাথে আলোক ফাঁদের ব্যবহার বেড়েই চলছে।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি