খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

আল্লাহ তা’আলার প্রতি মুসলিম বান্দার আদব (পর্ব : ০৩)

মাওলানা জুবায়ের হাসান

মুসলিম ব্যক্তি তার প্রতি আল্লাহ তা’আলার অগণিত নি’য়ামতের প্রতি লক্ষ্য করে; আরও লক্ষ্য করে ঐসব নি’য়ামতের প্রতি, যেসব নি’য়ামত তার মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময় থেকে শুরু করে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ (মৃত্যু) করা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে তাকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। ফলে সে তার নিজ মুখে তাঁর যথাযথ প্রশংসা ও গুণকীর্তন করার দ্বারা এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহকে তাঁর আনুগত্যের অধীনস্থ করে দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার শুকরিয়া আদায় করে; আর এটাই হলো তার পক্ষ থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে আদব; কেননা, নি’য়ামতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অনুগ্রহকারীর অনুগ্রহকে অস্বীকার করা, তাকে এবং তার ইহসান ও অবদানকে অবজ্ঞা করাটা কোনো আদব বা শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
وَمَا بِكُمْ مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ

তোমাদের নিকট যেসব নিয়ামত রয়েছে, তা তো আল্লাহর নিকট থেকেই (এসেছে)। -সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৩

আর মুসলিম ব্যক্তি গভীরভাবে লক্ষ্য করে যে, আল্লাহ তা’আলা তার সম্পর্কে জানেন এবং তার সকল অবস্থা অবলোকন করেন; ফলে তার হৃদয়-মন তাঁর ভয়ে ও তাঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে; যার কারণে সে তাঁর অবাধ্যতায় লজ্জিত হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধাচরণ ও তাঁর আনুগত্যের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাওয়াটাকে রীতিমত অপমান মনে করে। সুতরাং এটাও তার পক্ষ থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে আদব; কেননা, গোলাম কর্তৃক তাঁর মালিকের সাথে অবাধ্য আচরণ করা অথবা মন্দ ও ঘৃণ্য কোনো বস্তু বা বিষয় নিয়ে তাঁর মুখোমুখি হওয়া, অথচ তিনি তা সরাসরি দেখতে পাচ্ছেন— তা কোনো ভাবেই আদব বা শিষ্টাচরের মধ্যে পড়ে না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন:
مَا لَكُمْ لَا تَرْجُونَ لِلَّهِ وَقَارًا . وَقَدْ خَلَقَكُمْ أَطْوَارًا

তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের পরওয়া করছ না। অথচ তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে। -সূরা নূহ, আয়াত: ১৩-১৪

অনুরূপ মুসলিম ব্যক্তি গভীরভাবে এটাও লক্ষ্য করে যে, আল্লাহ তা’আলা তার উপর ক্ষমতাবান, সে তাঁর আয়ত্ত্বধীন এবং তাঁর দিকে ছাড়া তার পালানোর, মুক্তির ও আশ্রয় নেয়ার আর কোনো জায়গা নেই; সুতরাং সে আল্লাহর দিকে ধাবিত হবে, তাঁর সামনে নিজেকে সমর্পণ করে দেবে, তার যাবতীয় বিষয়াদি তাঁর নিকট সোপর্দ করবে এবং তাঁর উপর ভরসা করবে; ফলে এটা তার পক্ষ থেকে তার প্রতিপালক ও সৃষ্টা আল্লাহ তা’আলার সাথে আদব বলে গণ্য হবে; কেননা, যাঁর থেকে পালিয়ে বেড়ানোর কোনো সুযোগ নেই তাঁর কাছ থেকে পালানো, যার কোনো ক্ষমতা নেই তার উপর নির্ভর করা এবং যার কোনো শক্তি ও ক্ষমতা নেই তার উপর ভরসা করা কোনো আদব বা শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন:
مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلَّا هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا

এমন কোন জীব-জন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়। -সূরা হুদ, আয়াত: ৫৬

অনুরূপ মুসলিম ব্যক্তি এটাও গভীরভাবে লক্ষ্য করে যে, আল্লাহ তা’আলা তার সকল বিষয়ে তার প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তার প্রতি ও তাঁর (আল্লাহর) সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া ও করুণা করেন, যার কারণে সে এর চেয়ে আরও বেশি আশা করে; ফলে সে খালেসভাবে তাঁর নিকট অনুনয়, বিনয় ও নিবেদন করে এবং ভালো কথা ও সৎ আমলের ওয়াছিলা ধরে তাঁর নিকট প্রার্থনা করে; সুতরাং এটা তার পক্ষ থেকে তার মাওলা আল্লাহ তা’আলার সাথে আদব বলে গণ্য হবে; কারণ, যে রহমত সকল কিছুকে বেষ্টন করে রেখেছে তার থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া, যে ইহসান সকল সৃষ্টিকে শামিল করে তার থেকে হতাশ বা নিরাশ হওয়া এবং যে দয়া ও অনুগ্রহ সকল সৃষ্টিকে অন্তর্ভুক্ত করে তার আশা ছেড়ে দেওয়ার মধ্যে কোনো আদব বা শিষ্টাচার নেই।

আল্লাহ তা’আলা বলেন :
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ

আর আমার দয়া তো প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে রয়েছে। -সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত: ১৫৬

আর মুসলিম ব্যক্তি এটাও গভীরভাবে লক্ষ্য করে যে, তার প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা’র পাকড়াও বড় কঠিন, তিনি প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন এবং তিনি খুব দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী; ফলে সে তাঁর আনুগত্য করার মাধ্যমে তাঁকে ভয় করে এবং আত্মরক্ষা করে তাঁর অবাধ্য না হওয়ার মধ্য দিয়ে; ফলে এটাও আল্লাহ তা’আলার সাথে তার পক্ষ থেকে আদব বলে গণ্য হয়; কারণ, কোনো বুদ্ধিমানের নিকটই এটা আদব বলে গণ্য হবে না যে, একজন দুর্বল অক্ষম বান্দা মহাপরাক্রমশালী প্রবল শক্তিধর মহান ‘রব’ আল্লাহ তা’আলার মুখোমুখী হবে বা তাঁর বিরোধিতা করবে; অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ وَمَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَالٍ

আর কোনো সম্প্রদায়ের জন্য যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছে করেন, তবে তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ছাড়া তাদের কোনো অভিভাবক নেই। -সূরা আর-রা’দ, আয়াত: ১১

মূলকথা হলো : মুসলিম ব্যক্তি কর্তৃক তার প্রতিপালকের দেয়া নি’য়ামতের জন্য তাঁর শুকরিয়া আদায় করা, তাঁর অবাধ্যতার দিকে ধাবিত হওয়ার সময় তাঁকে লজ্জা পাওয়া, তাঁর কাছে সত্যিকার অর্থে তাওবা করা, তাঁর উপর ভরসা করা, তাঁর রহমতের প্রত্যাশা করা, তাঁর শাস্তিকে ভয় করা, তাঁর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে এবং তাঁর ইচ্ছা মাফিক তাঁর কোনো বান্দার প্রতি শাস্তিমূলক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাঁর প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করাটাই হলো আল্লাহ তা’আলার সাথে তার আদব রক্ষা করে চলা; আর বান্দা কর্তৃক এ আদবের যতটুকু ধারণ ও রক্ষা করে চলবে, ততটুকু পরিমাণে তার মর্যাদা সমুন্নত হবে, মান উন্নত হবে এবং সম্মান বৃদ্ধি পাবে; ফলে সে আল্লাহর অভিভাবকত্ব ও তাঁর তত্ত্ববধানে থাকা ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তাঁর রহমত ও নি’য়ামত পাওয়ার উপযুক্ত হবে।

আর এটাই মুসলিম ব্যক্তির দীর্ঘ জীবনের একমাত্র চাওয়া এবং চূড়ান্ত প্রত্যাশা। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার অভিভাবকত্ব নসীব করুন, আপনি আমাদেরকে আপনার তত্ত্ববধান থেকে বঞ্চিত করবেন না এবং আমাদেরকে আপনার নৈকট্য হাসিলকারী বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত করুন; হে আল্লাহ! হে জগতসমূহের প্রতিপালক! আমাদের দু’আ কবুল করুন।

(লেখক : ইমাম ও খতিব, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)

খুলনা গেজেট/কেএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!