একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে সম্মুখ সমরে অংশ নেন মোক্তার হোসেন। অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ভারতের বারাসাতে (থুবা) নিয়েছিলেন প্রশিক্ষণ। যুদ্ধের মধ্যে হারান সঙ্গীদের, নিজে হন আহত। যুদ্ধের পর পিরোজপুর কলেজ মাঠে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের মতো তিনিও অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন। ‘জীবনের শেষ সময়ের অপেক্ষায় আছি। এ জীবনে দেশ স্বাধীন করার সাধ কি পাবো না’?-আক্ষেপ নিয়ে এসব কথা বলেন সত্তরোর্ধ্ব মো. মোক্তার হোসেন।
মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্তূক্ত করার দাবিতে শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, হানাদার বাহিনীর দখলদারির বিরুদ্ধে জীবন উৎসর্গে মাঠে নেমেছিলেন দায়িত্ববোধ থেকেই। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশ তাঁর এই বীর সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল আচারণ করেনি। স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত পার হতে বসলেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার যোগ্য সম্মান পায়নি।
মোক্তার হোসেন বলেন, জীবনের তাগিদে বরিশালের বানাড়ীপাড়া ছেড়ে খুলনাতে এসে বসবাস করছি। যুদ্ধের পরে জানতে পারলাম মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমি তাৎক্ষণিক বানাড়ীপাড়া কমান্ডার মো. হাচেন বালি ও ইউনিয়ন কমান্ডার মো. আবু হোসেন বালির সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য আবেদন করি। পরে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিয়ন কমান্ড পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি শাখা থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যয়পত্র সংগ্রহ করি। তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের সময় এলে সহযোগি তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে সাক্ষী হিসেবে তাঁদের সকল তথ্য প্রদান করে থাকি। কিন্তু কোন অদৃশ্য কারণে তাঁদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ না করে বাচাই কার্যক্রম থেকে সরে যেতে বলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার জলিল সাহেবের অধীনে যুদ্ধ করেছেন মোক্তার হোসেন। তিনি বললেন, দেশ মাতৃকার মুক্তি সংগ্রাম করেছিলাম শুধুই দায়িত্ববোধ থেকে। কোনো প্রকার ব্যক্তিগত লাভের আশায় যুদ্ধে যাননি বিধায় স্বাধীনতার পরও কোনো অর্জনের পিছনে ছোটেননি তিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে স্থানীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তাঁর নাম না থাকায় পুরোপুরি তাজ্জব বনে যেতে হয়েছে তাঁকে।
সত্তরের কোঠায় পা রাখা বৃদ্ধ মোক্তার হোসেন জানান, ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠি ও কাউখালি এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ভারতে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ট্রেনিং নম্বর ৩৬৬৬। দেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন বাজি রাখতে গড়িমসি করেননি একটুও। কিন্তু সেই স্বাধীন দেশ তাঁকে একটুখানি মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় প্রদানে কৃপণতা দেখিয়েছে বলে দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সমস্ত প্রমাণপত্র আমার আছে। যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি তাদের মধ্যে জীবিত সহযোদ্ধারাও এ ব্যাপারে সাক্ষী দিয়েছেন। তবুও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দান করার যোগ্যতা আমাকে দেয়া হচ্ছে না। আর এমন বিড়ম্বনা এই বৃদ্ধ বয়সে তাঁর পক্ষে সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি। তাই অন্তত মৃত্যুর আগে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা তাঁর।
খুলনা গেজেট / এআর