জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শফিউল বারী বাবু আর নেই (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। গত কয়েকদিন যাবৎ রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে এ্যাপোলো হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান খুলনা গেজেটকে শফিউল বারী বাবুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। শফিউল বারী বাবু মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারি বাবু বেশ কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, শফিউল বারী বাবু খুব অসুস্থ। তার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীসহ সংগঠনটির নেতারা রয়েছেন। এরআগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন- নবী- খান সোহেল ও ইশরাক হোসেন তাকে দেখতে হাসপাতালে যান।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবু ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এ ছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছিলেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫১ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গণমাধ্যম শাখার সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট থাকায় সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে রাজধানী ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাত পৌনে ২টার দিকে তাঁকে এভার কেয়ার হাসপাতালে (সাবেক এ্যাপোলো) স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবুর প্রথম জানাজা আজ সকাল ১০টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হবে। বাদ আছর লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার জানান, শফিউল বারী বাবু বেশ কিছুদিন ধরে ফুসফুসে সংক্রমণজনিত রোগে ভুগছিলেন। এর ফলে তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি রাজধানীর ইস্কাটনের বাসাতেই ছিলেন। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে দ্রুত তাঁকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
গোলাম সারোয়ার আরো জানান, চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হলে ফলাফল নেগেটিভ আসে।
এদিকে অসুস্থ থাকার সময়ে শফিউল বারী বাবুর চিকিৎসার নিয়মিত খোঁজ-খবর নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে ব্যথিত। বাবুর অকাল মৃত্যুতে তিনি শোক জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বাবুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শফিউল বারী বাবু ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিএনপির ও এর সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক পদে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুণরুজ্জীবনের আন্দোলনে সামিল থেকেছেন তরুণদের নেতা হিসেবে। গণতন্ত্রের প্রতি ছিল তাঁর দায়বদ্ধতা। দলের সব সংকটকালে তাঁর সাহসী নেতৃত্ব ছিল নেতাকর্মীদের জন্য প্রেরণার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁকে অনেকবার কারাভোগ করতে হয়েছে।
শফিউল বারী বাবু ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ছাত্ররাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছিলেন। সৎ, কর্মীঘনিষ্ঠ ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে তাঁর পরিচয় পাওয়া যায় ছাত্রজীবন থেকেই। রাজনীতিকেই জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন তিনি। দলের কর্মসূচি পালনে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপদ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনার থাবায় আতঙ্কিত ও নিরন্ন মানুষের কাছে ত্রাণ তৎপরতায় তিনি দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন।
বিএনপি মহাসচিবের শোক
শফিউল বারী বাবুর অকাল মৃত্যুতে বিএনপি মহাসচিব গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বিএনপির রাজনীতির এক নির্ভিক সৈনিক ছিলেন মরহুম শফিউল বারী বাবু। দলের সব ক্রান্তিকালে শফিউল বারী বাবু দায়িত্ব পালন করতেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। স্বৈরশাহীর নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করেও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে মরহুম বাবু থাকতেন সামনের কাতারে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আইনের শাসন, মানবিক মর্যাদা, মৌলিক-মানবাধিকারসহ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। বাবুর রাজনৈতিক চিন্তা ছিল দেশ ও দশের পক্ষে। তাই ছাত্ররাজনীতি শেষ করার পর স্বেচ্ছাসেবক দলের দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত এলাকায় সহায়তা দানের জন্য অসহায় মানুষের পাশে ছুটে যেতেন। নানা বাধার মুখেও মরহুম বাবু দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে অদম্য সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে গেছেন। দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের আঘাতে তাঁর মতো একজন যোগ্য ও দক্ষ নেতা না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় বিএনপির সব নেতাকর্মী শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। ছাত্রজীবন থেকে শহীদ জিয়ার আদর্শ ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে দলের সাংগঠনিক তৎপরতায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। এই জন্য নিবেদিতপ্রাণ এই নেতাকে সইতে হয়েছে সরকারি নানা শারীরিক ও মানসিক জুলুম-নির্যাতন। তাঁর এই সংগ্রামী ভূমিকার জন্য তিনি দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
দেশে করোনার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিজের জীবনকে বিপন্ন করে নিরন্ন কর্মহীন মানুষের পাশে বারবার ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে দাঁড়িয়েছেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। অকালে পৃথিবী থেকে তাঁর চলে যাওয়া দলের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসিব করুন।
আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকার্ত পরিবার, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পাঠানোর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির শোকবার্তা
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহসভাপতি গোলাম সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ জামানসহ কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী সব পর্যায়ের নেতাকর্মী।
খুলনা গেজেট/এআইএন