১০ মাস পর নতুনভাবে শুরুর চিন্তায় বদলে যাচ্ছে পুরনো অনেক কিছুই। বিশেষ করে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের রূপরেখাই বদলাচ্ছে বেশি। পরিবর্তনের হাওয়ায় উড়ে ব্যাটিং অর্ডারে পিছিয়ে যাচ্ছেন এমনকি সাকিব আল হাসানও। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়ে প্রিয় তিন নম্বরে ফিরেছিলেন এই অলরাউন্ডার। এরপর বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ওই পজিশনেই। তবে নিষেধাজ্ঞার পর কালকের প্রথম ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার সময় তাঁর ঠিকানা হচ্ছে মিডল অর্ডারে। প্রতিশ্রুতিশীল এক তরুণকে বড় মঞ্চে থিতু হওয়ার সুযোগ করে দিতে তাঁকে চার নম্বরে ঠেলে দিচ্ছেন রাসেল ডমিঙ্গো। বাংলাদেশ দলের হেড কোচের ভাবনায় পরিবর্তন এই একটিই নয়। গতকাল বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসে জানালেন, ওপেনার সৌম্য সরকারকে এবার ‘ফিনিশার’-এর ভূমিকায় দেখতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন লেট মিডল অর্ডারে।
তিনে দারুণ সফল সাকিবকে চারে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে ডমিঙ্গো একই সঙ্গে প্রাধান্য দিচ্ছেন দুটি বিষয়। তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তকে তৈরি হওয়ার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি সমৃদ্ধ করতে চান উপমহাদেশের উইকেটে মিডল অর্ডারও, ‘অবশ্যই শান্ত খুব ভালো ছন্দে আছে। সাকিবের ফেরাটা দারুণ ব্যাপার। ওর অবিশ্বাস্য এক বিশ্বকাপ কেটেছিল তিন নম্বরেই। তবে এই মুহূর্তে আমি চার-পাঁচ-ছয়ে সাকিব-মুশফিক-রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের কথা ভাবছি। এতে আমাদের মিডল অর্ডার হবে পরিণত এবং অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। আমরা জানি, উপমহাদেশে মিডল অর্ডার খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
নাজমুলের মতো তরুণকে উন্নতির সুযোগ করে দিতে টপ অর্ডারই সেরা জায়গা বলেও মনে করেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে সে খেলেছে। কয়েকজন তরুণ ব্যাটসম্যানের উন্নতির ব্যাপারটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। উপমহাদেশে টপ অর্ডার হলো তরুণ ব্যাটসম্যানের উন্নতির সেরা জায়গা।’ সেই সঙ্গে আছে লম্বা সময় পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাওয়া সাকিবকে ‘ব্রিদিং স্পেস’ দেওয়ার ভাবনাও, ‘অনেক দিন ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে সাকিব। চার নম্বরে খেললে সে কিছুটা শ্বাস নেওয়ার জায়গা পাবে।’ তাই বলে এই ব্যাটিং অর্ডারই যে শেষ কথা হবে, তাও নয়। বরং ২০২৩ বিশ্বকাপ সামনে রেখে আরো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করে দেখতে চান ডমিঙ্গো, ‘এমন নয় যে এই ব্যাটিং লাইনই ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে। বিশ্বকাপের এখনো অনেক দিন বাকি। ব্যাটিং লাইন আপ ঠিক করার আগে আমাদের অনেকগুলো বিকল্প নিয়েই কাজ করতে হবে।’
সৌম্যকে যেমন আপাতত নিয়ে যাচ্ছেন সাত নম্বরে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাসের ওপেনিং জুটি দারুণ সফল হওয়ায় সৌম্যর জন্য খুঁজতে হয়েছে বিকল্প, ‘তামিম ও লিটনের ওপেনিং জুটির কারণে আমাদের টপ অর্ডার মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত এখন। আমরা সম্ভবত সৌম্যকে মিডল অর্ডারে খেলিয়ে দেখতে পারি। ইনিংসের শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারবে, এমন কাউকে খুঁঁজছি আমরা। শেষের দিকে মানানসই কাউকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা তাই চালিয়ে যেতে হবে আমাদের।’ এই ভূমিকায় সৌম্য সফল হবেন বলেও আশাবাদী ডমিঙ্গো, ‘বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে সবাই বিভিন্ন ভূমিকায় খেলবে। এর পরই আমরা ব্যাটিং লাইন আপ চূড়ান্ত করব। এই মুহূর্তে আমরা রিয়াদের (মাহমুদ উল্লাহ) সঙ্গে ইনিংস শেষ করার জন্য সৌম্যর দিকে তাকিয়ে আছি। সে ক্লিন হিটার। ওর ওপর আস্থাও আছে আমার। আশা করি সে ভালোই করবে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়েই নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য পেসারদের তৈরি হওয়ার সুযোগও করে দিতে চান ডমিঙ্গো, ‘আমরা এমন দল হয়ে থাকতে চাই না, যারা স্পিনারদেরই বেশি খেলায়। তা ছাড়া ছয় সপ্তাহের মধ্যে আমরা নিউজিল্যান্ডেও যাচ্ছি। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সেখানে আমরা শুধু একজনই স্পিনার খেলাব। তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য আমাদের পেসারদের তৈরি করতে হবে। কাজেই তিন পেসার ছাড়া আমি খেলব বলে মনে হয় না।’
খুলনা গেজেট/কেএম