চীনের হারবিনে চলছে তুষার ও বরফের তৈরি ভাস্কর্যের আন্তর্জাতিক উৎসব। বরফ কেটে বানানো হয়েছে কেল্লা, প্রাসাদ, ঘরবাড়ি। আলো আর বরফে তৈরি চোখ ধাঁধাঁনো পরিবেশ দেখতে সেখানে ভিড় জমাচ্ছে হাজার হাজার পর্যটক।
চীনের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় হেইলংজিয়াং প্রদেশের হারবিন শহরে প্রতি বছর যে তুষার ভাস্কর্য উৎসব হয় তা পৃথিবীর অন্যতম সবচেয়ে বড় এ ধরনের উৎসব।
বরফ কেটে বিশাল আকৃতির প্রমাণ সাইজের ভবন এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ এই উৎসবের বিশেষত্ব।
এ ছাড়া এই উৎসবের মৌসুমে হারবিনে আয়োজন করা হয় বরফের ঢাল বেয়ে স্লেজ চালানোর, চলে বরফে ফুটবল (আইস ফুটবল) এবং হকি (আইস হকি) খেলা। থাকে স্পিড স্কেটিং ও স্কি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা।
প্রতি বছর দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসে এই চোখ ধাঁধানো বরফ উৎসবে যোগ দিতে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এবছর যেহেতু চীনে ঢোকার ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ রয়েছে, তাই এবছর এই বরফ ভাস্কর্য ও নানান ধাঁচের অভিনব সব বরফ ভবন দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন চীনের ভেতরে বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ।
দিন কয়েক আগে শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। গত বছরের উৎসবে তৈরি একটি বরফ ভাস্কর্য যাতে কর্মীর মুন্সিয়নার ছাপ ছিল স্পষ্ট।
অনেক দম্পতি এই উৎসবের সুযোগ নিয়ে হারবিনে তাদের বিয়ের আয়োজন করেন বরফ নগরীতে ও বরফ নগরীর ভাস্কর্যকে বিয়ের থিম হিসাবে ব্যবহার করে। জনপ্রিয় এই বিয়ের ভেন্যু বুক করার জন্য লম্বা লাইন পড়ে হবু দম্পতিদের।
এই উৎসব শুরু হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। একবারই এই উৎসবে ছেদ পড়েছিল চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়। তখন অনেক বছরের জন্য এই উৎসব বন্ধ হয়ে যায়। আবার পুরোদমে এই জনপ্রিয় উৎসব শুরু হয় ১৯৮৫ সালে।
বরফ খোদাই করে বরফ নগরীতে ভাস্কর্য ও ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ডিসেম্বর মাসে। প্রায় ৩০০ “বরফ খনিশ্রমিক” কাজ করেন সারা ডিসেম্বর মাস জুড়ে এবং গড়ে তোলেন এই সব অভিনব কাঠামো। এদের বেশিরভাগই সাধারণ সময়ে কাজ করেন হয় নির্মাণ শিল্পে শ্রমিক হিসাবে, নয় কৃষিকাজে।
বরফের এই নগরী গড়ে তুলতে হাজার হাজার বরফের ব্লক তুলে আনা হয় শীতে জমাট বেঁধে যাওয়া এক কিলোমিটার বিস্তৃত সনঘুয়া নদী থেকে। হারবিন শহরের চারদিক দিয়ে প্রবহমান এই সনঘুয়া নদী।
এই বরফের ব্লকগুলো ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া যায় উৎসবস্থলে, যেখানে কর্মীরা বানান প্রমাণ আকৃতির কেল্লা, প্যাগোডা, সেতু, নানা ধরনের ভবন, ভাস্কর্য এমনকি বরফের তৈরি রেস্তরাঁও।
বরফ শ্রমিক ওয়াং কিউশেং রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে বলেন, কেন কৃত্রিম বরফের চেয়ে জমে যাওয়া নদীর বরফ তাদের পছন্দ: ”কৃত্রিম বরফ তেমন শক্ত হয় না এবং বাতাসের দাপট থাকলে সেই তেজের মুখে শক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না এসব শিল্পকর্ম।
শ্রমিকরা হাঁটু পর্যন্ত বুট জুতো, গরম কোট, মোটা দস্তানা আর কান ঢাকা টুপি পরে হিমাঙ্কের চেয়ে কম তাপমাত্রায় দিনের পর দিন কাজ করেন এই ভাস্কর্য গড়ে তুলতে।
‘আমরা প্রতিদিন কাজে যাই ভোর ছটায়,” রয়টার্সকে বলেন ঝাং ওয়েই।
”সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ শেষ করতে কখনও কখনও ওভারটাইমও করতে হয় রাত ৮টা নটা পর্যন্ত, কখনও বা মধ্যরাতের পরও।”
বরফের ব্লক একটার ওপর একটা বসিয়ে দেয়াল তৈরি করা হয়। শ্রমিকরা এরপর করাত, চিশেল ও শাবল, গাঁইতি ব্যবহার করে বরফের মধ্যে ফুটিয়ে তোলেন জানালা দরোজা এবং সবরকম খুঁটিনাটি নক্সার কাজ।
এমনকি পর্যটকদের বসে খাবার জন্য তারা তৈরি করেন বরফের রেস্তোরাঁ, যেখানে টেবিল এবং অধিকাংশ আনুষঙ্গিক আসবাব সবই বরফ খোদাই করে তৈরি করা হয়। পর্যটকদের জন্য এটাও আলাদা আকর্ষণ। আর রাতের আলোকসজ্জা এই বরফ নগরীকে রঙিন ও অপূর্ব করে তোলে। হারবিন উৎসব চলবে ২৫শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
খুলনা গেজেট/কেএম