ম্যাচের শুরুতেই চমক দেখায় মোহামেডান, মাত্র ১ মিনিটের মধ্যেই প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়ে নিযন্ত্রণ নিয়ে নেয় সাদাকালো শিবির । কিন্তু এ দাপট ধরে রাখতে পারেনি তারা, ষষ্ঠ মিনিটে ১-১ গোলে সমতা প্রতিপক্ষ। এর চার মিনিট পরই ম্যাচের বয়স যখন ১০ মিনিট সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ২-১ গোলে লিড কেড়ে নেয় মোহামেডানের কাছ থেকে। এই অবস্থাই বলে দিচ্ছে ফেডারেশন কাপ ফুটবলের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথমার্ধ কতটা উত্তেজনাকর ছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাদাকালো শিবির ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিদায় বরণ করে নেয়। টাইব্রেকারে ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের টিকিট পেয়েছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। তারা সাডেনডেথে ৭-৬ গোলে হারিয়েছে মোহামেডানকে । গতবারের সেমিফাইনালিস্টদের বিদায় করে শেষ চারে টিকিট পেলো সাইফ স্পোর্টিং। নির্ধারিত ৯০ মিনিট এবং অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা ২-২ গোলে শেষ হলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও ৪-৪ গোলে সমতা। তারপর সাডেনডেথে ভাগ্য নির্ধারণ।
হারজিত বাদ দিলে এ ম্যাচটি এবারের ফেডারেশন কাপের সেরা। বিশেষ করে প্রথম ১০ মিনিট দর্শক মনে রাখবে দীর্ঘ দিন। অনেকের মতে এটাই মৌসুমের সেরা ‘প্রথম ১০ মিনিট।’ ১৮ সেকেন্ডেই এগিয়ে যেতে পারতো মোহামেডান। কিন্তু ফাঁকায় পাওয়া বলে দূর্বল শট নিয়েছিলেন ফরহাত মনা। ক্লিয়ার করে বল বাইরে পাঠান সাইফের রহমত মিয়া।
ওই কর্নার থেকেই গোল পেয়ে যায় সাদাকালোরা- ম্যাচের বয়স তখন ৫২ সেকেন্ড। হাবিবুর রহমান সোহাগের কর্নারে বুরকিনা ফাসোর ডিফেন্ডার মুনজির হেডে বল ছোটবক্সে দেন, বাতাসে ভাসা বলে আতিকুজ্জামান হেডে এগিয়ে দেন ১০ বারের চ্যাম্পিয়নদের।
এগিয়ে যাওয়ার পরের তিন মিনিট সাইফের রক্ষণে ঝড় তোলে মোহামেডান। তিন-তিনটি সুযোগ তৈরি করে। কাজে লাগতে পারলে প্রথম চার মিনিটেই অন্তত ৪-০ গোলে এগিয়ে থাকতে পারতো মোহামেডান। মোহামেডান যখন একের পর এক সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছিল তখন কর্নার থেকেই সমতা ফিরিয়ে আনে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। ডান প্রান্ত থেকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের নেয়া কর্নারে অরক্ষিত থাকা নাইজেরিয়ান এমানুয়েল ডান পায়ের প্লেসিংয়ে গোল করেন।
চার মিনিট পর উল্টো লিড নেয় সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। গোলরক্ষক পাপ্পু হোসের শট মোহামেডান সীমানায় উড়ে এলে ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন হাবিবুর রহমান সোহাগ। নাইজেরিয়ান কেনেথ সুযোগ কাজে লাগাতে কোনো ভুল করেননি। ৫২ সেকেন্ডে ১-০ তে এগিয়ে যাওয়া মোহামেডান ১০ মিনিটে ১-২ গোলে পিছিয়ে।
পিছিয়ে পড়া মোহামেডান সমতায় ফিরেই বিরতি যায়। ৪৪ মিনিটে শাহেদ মিয়ার কর্নার থেকে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে লাফ দিয়ে দুর্দান্ত হেডে গোল করে সমতায় ফেরায় মালির সোলায়মান দিয়াবাতে। সেটাই হয়ে থাকে ম্যাচের শেষ গোল। বাকি ৭৫ মিনিট আর গোল দেখেনি দর্শক। তবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারির দর্শকদের দারুণ একটি জমজমাট ম্যাচ উপহার দিয়েছে ফেডারেশন কাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালটি।
৯০ নাইজেরিয়ান জন ওকোলি একক প্রচেষ্টায় ৩ জনকে কাটিয়ে ঢুকে গোলের সহজ সুযোগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু মোহামেডান গোলরক্ষক বিপু দারুণভাগে ক্লিয়ার করেন কর্নারের মাধ্যমে। নির্ধারিত সময়ে শেষ হতে যাওয়া ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়ে টেনে নেন মোহামেডান গোলরক্ষক।
১১০ মিনিটে রহিমউদ্দিন মোহামেডান গোলরক্ষককে একা পেয়েও পারেননি সাইফকে এগিয়ে নিতে পারেননি। বিপু এগিয়ে এসে ক্লিয়ার করেন। কর্নার থেকে জন ওকোলির শটে পরাস্ত হয়েছিলেন মোহামেডান গোলরক্ষক। কিন্তু লাইন থেকে ক্লিয়ার করেন বুরকিনা ফাসোর মানজির। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে মোহামেডানের সোলেমান দিয়াবাতে, উরু নাগাতা, সোহাগ ও মিঠুন গোল করলেও পারেননি সজিব। তার নেয়া শট রুখে দেন সাইফের গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেন। সাইফের কেনেথ শাহেদ, জন ওকোলি, এমানুয়েল গোল করলেও পারেননি ইয়াসিন আরাফাত। জাতীয় দলের এ ডিফেন্ডারের শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে।
সাডেন ডেথে মোহামেডানের বুরকিনো ফাসোর মানজির, আমির হাকিম বাপ্পী গোল করলেও বাইরে মারেন ম্যাচের প্রথম গোলদাতা আতিকুজ্জামান। রহিমউদ্দিন, রহমত মিয়া ও সিরাজুদ্দিনের গোল সাইফকে তুলে নেয় সেমিফাইনালে।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন