মোসা. ডালিয়া আক্তার(২৬)। রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের মো. আব্দুল ওহাব ও হেলেনা বেগম দম্পতির তিন কন্যার মধ্যে বড় সন্তান। তার দাদার চাকুরীর সুবাদে সিএন্ডবি কলোনীতে তাদের বসবাস। তার পিতা সড়ক ও জনপদ খুলনা বিভাগীয় সাব ডিভিশনে নাইট গার্ড হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তবে স্থায়ী পদে না হওয়ায় চাকরী চলে যায়। তখন সে ৯ ম শ্রেণিতে পড়ত আর ছোট দুই বোন ৪র্থ ও ২য় শ্রেণিতে পড়তো। তার বড় চাচা তখন তাদের সংসার চালাতেন। আর সে বাবার চাকরি যাবার পর এসএসসি পাশের আগেই আয়ের পথে নামতে বাধ্য হয়। শুরু হয় প্রবল ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে শত বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই। সে টিউশনি করে পড়াশুনার খরচ জোগাড়ের পাশাপাশি নিজের লেখাপড়া চালু রাখে। ২০০৮ সালে রূপসা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সে এসএসসি পাশ করে। টিউশুনি করে মাষ্টার্স পর্যন্ত পড়ালেখা করে এবং ছোট দুই বোনকে ভালো পরিবারে বিয়ে দেয়। পিতা-মাতার পাশে দাঁড়াতে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের সিঁড়িতে পা দিতে নারাজ।
তার বাবা দীর্ঘদিন যাবত রূপসাস্থ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন ও বীর বিক্রম মহিবুল্লাহর মাজার দেখাশুনা করে আসছেন। সম্মানি হিসেবে বাংলাদেশ নৌ – বাহিনী থেকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা পান ।
এরই মধ্যে ছোট বড় কয়েকটি বেসকারি স্কুল এবং সংস্থার সাথে কাজ করার সুযোগ পায় ডালিয়া। পরে ২০১৫ সালে কেয়ার বাংলাদেশ নামক একটি এনজিও এর আওতায় যশোরে মহিলাদের উন্নয়ন মূলক প্রকল্পে ট্রেইনার হিসাবে কাজ পায়। সেখানে জুট ডাইভার্স প্রকল্পে জুট দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরী করার প্রশিক্ষক এর দায়িত্ব পালন করে। বর্তমানে ২০১৮ সালে ডিসেম্বর মাসের ৩ তারিখে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এ কমিউনিটি ফ্যাসিলেটেটর হিসেবে কাজ শুরু করে রূপসা উপজেলায় শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করছে। যেখানে ২০২০ সালে কোভিড -১৯ এর রিয়েল লাইফ হিরো আখির মত শিশু সহ অনেক শ্রমজীবী শিশু ও তাদের পরিবারের জীবন মানের পরিবর্তনে কাজ করছে। এছাড়া ঝড়ে পড়া শিশুদের নিয়ে গড়ে উঠা অনুশীলন মজার স্কুলে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে । সর্বশেষ শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে গেল বছর উপজেলা পর্যায়ে জয়িতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। রূপসা উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক দপ্তর ১০ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবসে তাকে সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করেন।
খুলনা গেজেটকে ডালিয়া আক্তান বলেন, আমি বিসিএস (শিক্ষা) পাশের মাধ্যমে একজন প্রথম শ্রেণির শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। শিক্ষাকতার মাধ্যমে সুশিক্ষিত নাগরিক তৈরিতে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের স্বপ্ন পূরনে উৎসাহ দেওয়ার স্বপ্ন দেখি। তবে স্বাদ আছে সাধ্য নাই। জীবনে চলার পথটা সুখের ছিল না। সমাজের মানুষের ছোট বড় অনেক কথা শুনতে হয়েছে। আগের তুলনায় মহান আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি।
ডালিয়া আরো বলেন, আমার বাবার খুব ইচ্ছা ছিলো আমি যেন জীবনে ভালো কিছু করতে পারি । বাবার পক্ষে লেখা পড়ার খরচ চালানোর সামর্থ্য না থাকলেও উৎসাহ দিতে কখনো ভুলেননি। তিনি সব সময় আমার মনোবল বৃদ্ধিতে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের উদ্যেশ্যে তিনি বলেন, জীবনকে পরিবর্তন করতে শিক্ষা আর অধ্যাবসায় ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই। জীবনে প্রতিকূলতা থাকবে, তবে প্রবল ইচ্ছা শক্তি দিয়ে সেটা জয় করতে হবে।
রূপসা উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাহিরা খাতুন বলেন, আমরা প্রতিবছর যাচাই বাছাই করে সংগ্রামী অদম্য নারীদের মধ্য থেকে ৫টি ক্যাটাগরিতে ৫ জনকে জয়িতা সম্মাননা প্রদান করি তাদের উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য। তাছাড়া সমাজের অন্যরাও যাতে তাদের উঠে আসার গল্প থেকে শিক্ষা নিয়ে মনোবল বাড়াতে ও সফল হতে পারে। ডালিয়া জীবনে সংগ্রাম করে পড়ালেখা চালিয়ে আজ সফলতার পথে। আরো মনোবল নিয়ে যেন ভালো জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এজন্য তাকে জয়িতা সম্মাননা দিয়েছি। তার জন্য শুভ কামনা।
খুলনা গেজেট/এমএম