খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

করোনা ও বন্যায় নার্সারি ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে

ফুলতলা প্রতিনিধি

ফুলতলা উপজেলাধীন ৪নং ফুলতলা ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র বেজেরডাঙ্গায় প্রায় চারদশক পূর্বে গড়ে উঠা নার্সারি শিল্প ধুকে ধুকে চলছে। একদিকে করোনা অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা দেখা দেওয়ায় ভরা মৌসুমে নার্সারি মালিক ও নার্সারি ব্যবসায়ীদের মাখায় হাত। বাইরের ক্রেতাদের আগমন কম হওয়া এবং পরিবহন খরচ দ্বিগুণ হওয়ায় কেনাবেচা অনেক কম। এছাড়াও সিএন্ডবি’র পরিত্যক্ত স্থানে গাছের চারা রাখলে পিছনে জায়গায় মালিকদের ভাড়া দিতে গিয়ে নার্সারি মালিকদের টিকে থাকাই দুরহ হয়ে পড়েছে।

নার্সারি শিল্পের অবস্থা জানতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ দশকে ফুলতলার বেজেরডাঙ্গা এলাকায় গড়ে উঠে নার্সারি শিল্প। হাটি হাটি পা পা করে এর শ্রীবৃদ্ধি হতে থাকে। দুই এক বছর পূর্বেও এখানে প্রায় ১৬ থেকে ১৭শ’ নার্সারি শিল্প গড়ে উঠার কথা জানা যায়। কিন্তু এখন ১১ থেকে ১২শ’ নার্সারি রয়েছে বলে স্থানীয় নার্সারি মালিকরা জানিয়েছে। অবশ্য ফুলতলা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর ৯০ হেক্টর জমিতে ৩শ’ নার্সারি রয়েছে বলে জানান।

নার্সারী শিল্পের প্রসার ঘটানোর জন্য জায়গার অভাবে অনেক নার্সারি মালিক এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসার দিকে ঝুকছে বলে নার্সারি মালিকদের অভিযোগ। নার্সারি শিল্পের উপযোগি জমিতে ইটের ভাটা ও শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠায় জায়গার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে অনেক নার্সারি মালিক এলাকার বাইরে গিয়ে জমি লীজ নিয়ে চারা উৎপাদন করছে। এ জন্য উৎপাদন খরচও দ্বিগুণ হচ্ছে।

ফুলতলার মাটি নার্সারি শিল্প’র জন্য অত্যন্ত উর্বর হওয়ায় এখানে বিভিন্ন জাতের ফলজ, বনজ ও ঔষধি চারা উৎপাদান করা হয়। যেমন ফলজ আম, কাঁঠাল, লিচু, নারকেল, কুল, জামরুল, বাতাবি লেবু, বনজ চারার মধ্যে মেহগনি, সেগুন, সিরিশসহ অন্যান্য, ঔষধি গাছের মধ্যে আমলকি, হরতকি, বয়রা, চালতে, লেবুসহ দেশি বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির চারা উৎপাদন হয়।

ইতিপূর্বে এখান থেকে প্রতিদিন পরিবহনযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে নার্সারী মৌসুমে উৎপাদিত চারা ব্যাপকহারে বিক্রি হতো। বর্তমানে করোনা ও বণ্যার কারণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি কিছুটা বাধাগ্রস্থ হওয়ায় আশপাশ জেলা থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের আগমন কম হচ্ছে। এ নার্সারি শিল্প দিন দিন ধস নামছে বলে নার্সারি মালিকদের পক্ষ থেকে জানান হয়।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নার্সারি মালিক আঃ সালাম বলেন, ‘সারা বছর নার্সারীর শিল্প’র উপর নির্ভর করে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকি। এ বছর উৎপাদিত চারা বিক্রির পরিমাণ কম হওয়ায় আমাদের সারাবছর শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচ মিটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নার্সারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ফুলতলা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার জানান, সারা বাংলাদেশের মধ্যে ফুলতলার নার্সারী শিল্প অন্যতম স্থান দখল করে আছে। বর্তমানে নার্সারী শিল্প নানা সমস্যায় জর্জরিত। সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বার বার নার্সারি জোন ঘোষণার দাবি করা স্বত্তেও এটি বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এলাকায় যত্রতত্র ইট ভাটা ও শিল্প কলখানা গড়ে উঠায় নার্সারী শিল্পের প্রসার ঘটছে না। অপরদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা এবং করোনার কারণে নার্সারী শিল্পের ভরা মৌসুমে বাইরের ক্রেতার উপস্থিতি খুবই কম। বিভিন্ন জেলায় সামান্য পরিমাণ চারা বিক্রি হচ্ছে বলে কোন মতে নার্সারী ব্যাবসায়ীরা বেঁচে আছে।

অপরদিকে উপজেলা নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিগত মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার চারা বিক্রয় হত। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার চারাও বিক্রি হচ্ছেনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতিপূর্বে সিএন্ডবি এর জায়গায় নার্সারী ব্যবসায়ীরা উৎপাদিত চারা রেখে কেনাবেচা করত। বর্তমানে সিএন্ডবি’র পিছনে প্রকৃত জমির মালিকদের চারা অবতরণ ও বিক্রির জন্য ভাড়া দিতে হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।’

এদিকে ফুলতলা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা জানান, করোনার কারণে সরকারিভাবে বৃক্ষ মেলা না হলেও কৃষি দপ্তরের উদ্যোগে নার্সারী মালিকদের সকল ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!