তিনি ‘নতুন ভারতের’ প্রতিনিধি। তার মননে-চিন্তায় এবং দর্শনে ‘নিউ ইন্ডিয়া’। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে খেলতে নামার আগে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির মন্তব্যে উঠে এল এমনই বিষয়। কিন্তু কেন? কোন প্রশ্নের উত্তরে এই নতুন ভারতের কথা টানলেন তিনি?
আসলে, কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি গ্রেগ চ্যাপেল বলেছিলেন, ‘দ্য মোস্ট অস্ট্রেলিয়ান নন-অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার অফ অল টাইম’। বুধবার ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে ভারত অধিনায়ককে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলে দিলেন, ‘আমার যা চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব, তাতে আমি নতুন ভারতের প্রতিনিধিত্ব করি। আমি এভাবেই বিষয়টিকে দেখার চেষ্টা করি।’
অর্থাৎ বিরাট সাফ বুঝিয়ে দিলেন, গ্রেগের মতকে তিনি সমর্থন করেন না। তিনি ভারতীয়। নিজেকে অস্ট্রেলিয়ার চরিত্রের সাথে এক করে ফেলতে চান না। আসলে গ্রেগও কৌশলে বিরাট-বন্দনা করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের মহিমাই প্রচার করতে চেয়েছিলেন।
বিরাট আরো বলেন, ‘আমার যা মানসিকতা, তাতে অস্ট্রেলিয়ানদের সাথে তুলনা করার কারণ নেই। দেখার হলো, কীভাবে টিম ইন্ডিয়া তৈরি হয়েছে। এই নতুন ভারত চ্যালেঞ্জ নিতে জানে। ইতিবাচক এবং লড়াকু মানসিকতায় পরিপূর্ণ। যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন, আমরা সেটা নিতে প্রস্তুত।’
ভারত-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজ মানেই চাপা উত্তেজনা। মাঠে এবং মাঠের বাইরেও লড়াই। এই সিরিজেও সেই টেনশন থাকবে। বিরাট কিন্তু সে ব্যাপারটাকে পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি বরং মাঠে নামার আগে এ বার অনেকটাই দার্শনিকের ভূমিকায়। বিরাটের ব্যাখ্যা, ‘আমি মনে করি, এই বছরটা মানুষকে অনেক কিছু শিক্ষা দিয়ে গেল। বুঝিয়ে দিল, আগে আমরা অনেক কিছুই করেছি, যেগুলোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। দুই টিমের মধ্যে বা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে অহেতুক টেনশন করেছি, যা একেবারেই দরকার ছিল না। তুমি যদি পেশাদার হও, তাহলে শরীরী ভাষায় ইতিবাচক থাকবে, আগ্রাসন থাকবে। মাঠের মধ্যে এই জিনিসটা রাখতেই হবে। কিন্তু পেশাদারভাবে।’
অস্ট্রেলিয়ানরাও তাদের মানসিকতা বদলেছেন বলেই মনে করেন বিরাট। তিনি বলছেন, ‘আইপিএলে আমরা একসাথে খেলি। সেখানে দেখেছি, ওরাও মানিসকতায় অনেক বদল এনেছে। আমি আবারো বলছি, এবার গোটা বিশ্বের পরিস্থিতি অন্য। আমরা ভাগ্যবান যে, আবার মাঠে ফিরতে পেরেছি। এখানে দুটো টিমের প্রতি আরো অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। মনে হয়, মাঠে আমরা সেটা দেখবও। মাঠের লড়াই যথেষ্ট উপভোগ্য হবে।’
মাঠে এক-অপরের দিকে আঙুল তোলা হবে না বলে ক্রিকেট যে ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যাবে, সেটা মনে করেন না বিরাট।
তার সাফ কথা, ‘এই সিরিজে দুরন্ত লড়াই হবে। গুণগত মানের সাথে কোনো রকম সমঝোতা করা হবে না। লড়াই-টেনশন-আবেগ সবই থাকবে। কিন্তু সেটা কখনওই ব্যক্তিগত পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে না। আসলে আমরাও কিন্তু নিজেদের ক্যারিয়ারে সবাই অনেকটাই এগিয়ে এসেছি। পরিণতও হয়েছি। এটা মাথায় রেখেই লড়াই হবে।’
প্রথম টেস্টের পর দেশে ফিরে আসবেন বিরাট। সিরিজের বাকি তিন টেস্টে নেতৃত্ব আজিঙ্কা রাহানে, যার উপর যথেষ্ট ভরসা রাখছেন বিরাট।
তার কথায়, `আমাদের মধ্যে মানসিক বোঝাপড়া খুব ভালো। মাঠে আমাদের মধ্যে ব্যাটিংয়ের সময় দারুণ কিছু পার্টনারশিপ হয়েছে। সেটা বোঝাপড়া ভালো বলেই সম্ভব হয়েছে। দুটো প্র্যাকটিস ম্যাচেও এখানে রাহানে খুব ভালো ব্যাট করেছে। ও নিজের এবং আমাদের টিমের শক্তি জানে।’
বিরাট জুড়ে দিয়েছেন, ‘আমার অবর্তমানে রাহানে দারুণ ক্যাপ্টেন্সি করবে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। নিজে এবং ক্যাপ্টেন হিসেবে টিমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জিঙ্কের এটাই আদর্শ সময়। এবং সেটা ও পারবে।’
অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে শেষবার টেস্ট সিরিজ জিতে ফিরেছিল ভারত। বিরাট মনে করেন, এ বার প্রত্যাশা তাই অনেক বেশি। বলে দিলেন, ‘ভারতীয় টিম কেমন খেলবে, সে দিকেই তাকিয়ে সবাই। আমাদের ফোকাস এবং লক্ষ্য অবশ্যই থাকবে, গতবারের ফলাফলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। টিম হিসেবে খেলতে হবে আমাদের। এটাই আসল।’
খুলনা গেজেট/কেএম