নাট্যকার বৃন্দাবন দাসের জন্মদিন আজ। এ উপলক্ষে দুই ছেলে চিঠি লিখেছে তাঁকে। বাবাকে লেখা ছেলেদের সেই চিঠি পড়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি বৃন্দাবন দাস। কেঁদে ফেলেছেন তিনি।
বৃন্দাবন দাস টেলিভিশন নাটকের এক পরিচিত নাম। তাঁর লেখা গ্রামীণ গল্পের নাটক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে শহুরে গল্পের ডামাডোলে। ‘ঘর-কুটুম’, ‘আলতা সুন্দরী’, ‘জামাই মেলা’, ‘হাড়কিপটে’, ‘মোহর শেখ’, ‘সাকিন সারিসুরি’, ‘চৈতা পাগল’, ‘পাত্রী চাই’, ‘পত্র মিতালী’, ‘সার্ভিস হোল্ডার’ নাটকগুলো বা এই নামগুলোর সঙ্গে টিভি দর্শকেরা কমবেশি পরিচিত। সংখ্যা উল্লেখ করলে একক নাটক প্রায় সাড়ে ৩০০, ছোট-বড় মিলিয়ে ধারাবাহিকের সংখ্যাও প্রায় ৫০।
জন্মদিনটা নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ নেই বৃন্দাবন দাসের। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর পরিবার কেক নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তাঁর বাসায়। স্ত্রী অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি, দুই ছেলে দিব্য জ্যোতি, সৌম্য জ্যোতি ও চঞ্চল চৌধুরীর পরিবার মিলে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেছেন বৃন্দাবন দাস। ছেলেরা বাবাকে উপহার দিয়েছে শার্ট, টি–শার্ট ও একটি চিঠি। বৃন্দাবন দাস জানান, রাতে তাঁকে দুটি কেক কাটতে হয়েছে। একটি ছেলেদের আনা কেক, আরেকটি চঞ্চল চৌধুরীদের। সবাই মিলে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়েছেন।
প্রতি জন্মদিনেই বৃন্দাবনকে চিঠি লেখে ছেলেরা। বাবাকে নিয়ে তাদের অনুভূতির কথা লেখা হয় সেখানে। যথারীতি এবারও তাই। তবে এবারের চিঠিটি একটু দীর্ঘ। এবারের চিঠিতে কী লিখেছে তারা? জানতে চাইলে বৃন্দাবন বলেন, ‘ছেলে লিখেছে, বাবা, তোমরা হয়তো আমাদের চেয়ে আরও ভালো আর যোগ্য সন্তান পেতে, কিন্তু আমাদের মতো ভালোবাসা দেওয়ার মতো সন্তান পেতে না।’ কথাগুলো বলেই কয়েক মুহূর্তের জন্য চুপ হয়ে যান বৃন্দাবন দাস। তারপর বলেন, ‘পড়া শেষে আমি কান্না করে ফেলেছি। আমার চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পড়েছে।’
ছেলেদের এই ভালোবাসা যেকোনো বাবার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। যেকোনো মা–বাবার প্রত্যাশা, তাঁরা সন্তানদের কাছ থেকে এ রকম সম্মান আর ভালোবাসা পাবেন। বৃন্দাবন বলেন, ‘আমি হয়তো সামাজিকভাবে অনেক বড় কিছু না, হয়তো আমার অনেক ধনসম্পদ নেই, কিন্তু আমার দুই ছেলে আমাদের নিয়ে ভেতরে-ভেতরে প্রাউড ফিল করে। তাদের কাছে আমি বিশাল ধনী। আমাদের জীবনযাপন তাদের কাছে ভালো লাগে, মা–বাবাকে নিয়ে ছেলের এই অনুভূতি আমাকে প্রতি মুহূর্তে আবেগী করে তোলে।’ এ তো গেল পরিণত বয়সে সন্তানদের ভালোবাসার কথা। শৈশব-কৈশোরে জন্মদিনে মায়ের ভালোবাসার কথাও স্মরণ করেন এই নাট্যকার। পাবনা জেলার চাটমোহর থানায় তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। শৈশবে তাঁর জন্মদিন আসত অগ্রহায়ণের ২১ তারিখে। সেদিন মা পায়েস রান্না করে খাওয়াতেন তাঁকে। হয়তো বাড়ি থেকে দূরে ফুটবল খেলতে গেছেন, মা তাঁর জন্য পায়েস রান্না করে অপেক্ষা করে থাকতেন।
সম্প্রতি বৃন্দাবন দাসের লেখা একটি সাত খণ্ডের ঈদের নাটকের শুটিং শেষ হয়েছে। একজন সরকারি কর্মকর্তার গল্প অবলম্বনে শেষ করেছেন একটি টেলিছবির কাজ। ঈদের কিছু খণ্ড ও ধারাবাহিক নাটক নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। জানালেন, দীর্ঘ একটি ধারাবাহিক লেখার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে কাজ করবে সালাহউদ্দিন লাভলুর পুরোনো টিম। ভালো নাটক দিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন সবাই।
১৯৯৫ সালে ঢাকায় এসে তিনি যুক্ত হন মঞ্চনাটকে। নাটকের দল আরণ্যকে অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক লিখতেও শুরু করেছিলেন তিনি। ১৯৯৭ সালে লেখেন প্রথম নাটক ‘বন্ধুবরেষু’, পরিচালনা করেছিলেন সাইদুল আনাম টুটুল। একুশে টিভিতে দেখানো সেই নাটক বেশ সাড়া ফেলেছিল। সেই থেকে প্রায় দুই যুগ ধরে নাটকের চিত্রনাট্য লিখছেন তিনি।
খুলনা গেজেট/কেএম