মঙ্গলবার । ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ । ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছে

হত্যার উদ্দেশ্যে ড্রোন, হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ দেন শেখ হাসিনা

গেজেট প্রতিবেদন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর রায়ে বলা হয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থান শনাক্ত ও দমন করতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ড্রোন ব্যবহার এবং পরবর্তীতে হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন।

রায় অনুযায়ী, এসব নির্দেশনা উঠে এসেছে শেখ হাসিনা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের মধ্যে গত বছরের ১৮ জুলাই হওয়া ফোনালাপ থেকে। এ ছাড়া সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে তার কথোপকথনও আদালতে শোনানো হয়।

রায়ে বলা হয়, উক্ত কথোপকথনের পেনড্রাইভ ও সিডি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরি পরীক্ষা শেষে বিশেষজ্ঞরা এসব অডিওকে প্রকৃত ও জেনুইন বলে মত দেন। আদালতে অডিও শোনানোর পর ট্রাইব্যুনালও তা জাল বা কৃত্রিম নয় বলে মন্তব্য করে। ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় এটাই প্রথম রায়। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল বলেছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যার উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল–মামুন পরস্পর যোগসাজশে নৃশংস কর্মকাণ্ড সংঘটিত করেন। মামুনের সাক্ষ্যে প্রকাশ, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব, অতিরিক্ত সচিব, বিভিন্ন গোয়েন্দা ও আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে একটি কোর কমিটি গঠিত হয় এবং ১৯ জুলাইয়ের পর প্রতিরাতে তাদের বৈঠক বসত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায়।

মামুন জানান, আন্দোলনকারীদের অবস্থান শনাক্তে ড্রোন ব্যবহার এবং দমন–পীড়নে হেলিকপ্টার ও লেথাল উইপেন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। শেখ হাসিনা নিজে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেন এবং এই নির্দেশ সারা দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য মাকসুদ কামালের সঙ্গে শেখ হাসিনার ১৪ জুলাইয়ের কথোপকথন তুলে ধরে ট্রাইব্যুনাল বলেছে—তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, “রাজাকারদের তো ফাঁসি দিয়েছি, এবার তোদেরও তাই করব, একটাও ছাড়ব না।”

ট্রাইব্যুনালের মতে, এই বক্তব্য অত্যন্ত উসকানিমূলক এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মীদেরসহ আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহিংসতায় প্ররোচিত করেছে। এ–সংক্রান্ত অডিও ও প্রতিলিপি আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

রায়ে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করে, যা ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলে।

শিক্ষার্থীদের দাবি শোনার বদলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকে অবমূল্যায়ন করেন এবং ‘রাজাকারদের সন্তান’ উল্লেখ করে মন্তব্য করেন—যা শিক্ষার্থীদের কাছে অবমাননাকর ও আক্রমণাত্মক বলে বিবেচিত হয়। তার ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমবেত হয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন