মঙ্গলবার । ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ । ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২

মধ্যযুগীয় বর্বরতাও হার মেনেছে!

মাহমুদুল ফিরোজ বাবুল, শ্যামনগর

মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে শ্যামনগর উপজেলার হাবিবুর রহমান নামের এক নরপিশাচ। সে উপজেলার হরিনগর ইউনিয়নের পার্শ্বেখালী গ্রামের সাত্তার গাজীর ছেলে। হাবিবুরের নৃশংসতার শিকার হয়েছেন তারই আপন চাচাতো বোন তাসলিমা খাতুন। এই নৃশংসতায় সরাসরি সহোযোগিতা করেছেন হাবিবুরের স্ত্রী এবং তাসলিমা খাতুনের আপন ছোট বোন রেহেনা খাতুন এবং হাবিবুরের ভাবি ঝুনু আক্তার।

সম্প্রতি তাসলিমা খাতুন বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। তিনি তার ছোট বোনের স্বামী হাবিবুর রহমান, ছোট বোন রেহেনা খাতুন এবং হাবিবুরের ভাবি ঝুনু আক্তারসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করেন।

তাসলিমা খাতুন শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের ছোটকুপট (যোগিন্দ্রনগর) এলাকার আব্দুল হক গাজীর বড় মেয়ে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কয়েক বছর আগে স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় তালাক প্রাপ্ত হয়ে আমি (তাসলিমা) বাবার বাড়িতে ফিরে যাই। এই অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় চাচাতো ভাই এবং নিজের ছোট বোনের স্বামী হাবিবুর রহমান। হাবিবুরের ভাবি ঝুনু আক্তার সৌদি আরবে ১ লাখ টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখায়। তারা ঢাকায় নিয়ে পাসপোর্ট করার কথা বলে ঢাকার গাবতলীতে একটি হোটেলে নিয়ে খাবারের সাথে চেতনা নাশক ওষুধ খাইয়ে একাধিক ব্যক্তি ধর্ষণ এবং মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। আমার জ্ঞান ফিরলে হাবিবুরের কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করলেও কোন কাজ হয়নি।

এরপর হাবিবুর আর অপরিচিত কয়েকজন মিলে আমাকে আবার ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ভারত, সিলেটের সুনামগঞ্জ, শেরপুরসহ দেশের একাধিক জায়গায় কখনো ভাড়া বাসায় কখনো হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে ফোনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে। আমি বাঁধা দিলে হাত, পা, মুখ দড়ি দিয়ে বেঁধে সিগারেটের আগুন দিয়ে হাতে, পায়ে, বুকে, গোপন অঙ্গে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো।

এজহারে আরও বর্ণনা করা হয়, গত ৯ অক্টোবর ঢাকায় ভাড়া বাড়িতে নিয়ে হাবিবুর এবং অপরিচিত কয়েকজন ধর্ষণ করে। ১০ অক্টোবর রাতে দুই জন অপিরিচিত পুরুষ এনে হাবিবুর আমাকে তাদের কাছে যেতে বলে। আমি রাজি না হওয়ায় তারা বৈদ্যুতিক তাতাল গরম করে যৌনাঙ্গ, উরু, হাতে, পিঠে সব জায়গায় পুড়িয়ে দেয়। বিউটেন গ্যাসের সিলিন্ডার যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে পা দিয়ে চাপ দেয়। যন্ত্রণায় আমি চিৎকার করলে প্লাস দিয়ে আমার জিহ্বা মুড়িয়ে ধরে। এরপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
১৫ অক্টোবর ঢাকার ঐ বাড়ি থেকে পালিয়ে শ্যামনগর এসে বাবা-মাকে সব খুলে বলে এবং পরদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয় বলে তাসলিমা অভিযোগে উল্লেখ করে।

শ্যামনগর থানার উপ পরিদর্শক তুহিন বাওয়ালী বলেন, ঢাকার কেরানিগঞ্জের মালঞ্চ গ্রামের সায়েমের ৩ তলা বাসা থেকে হাবিবুর রহমান, রেহানা খাতুন ও ঝুনু আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।

শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোল্ল্যা হুমায়ুন কবির বলেন, ভিকটিম তাসলিমা খাতুন অর্থের লোভে নিজের ইচ্ছাতেই হাবিবুরের সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করে। হাবিবুরের স্ত্রী এবং তাসলিমার ছোট বোন রেহেনা বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। একপর্যায়ে হাবিবুর তার স্ত্রীর বিশ্বাস অর্জন করতে এই নৃশংসতা ঘটায়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন