সব হারিয়ে এখন আমরা নিঃস্ব। কোথায় যাবো? কোথায় থাকবো? এভাবেই বলছিলেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে শেষ সম্বল টুকু হারানো সেলুনের দোকানদার মোঃ আব্দুল জলিলের বৃদ্ধ মা।
সরকারি জায়গায় কোনো রকম ঘরের চাল তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করতো আব্দুল জলিল। সড়ক ও জনপদের দানব আকৃতির ভেকু মেশিন তাদের ঘর ভাঙতে আসলে জলিলের বৃদ্ধ মা তাদের জিনিসপত্র সরাতে মাত্র ১ দিনের সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো রকম সহানভুতি না দেখিয়ে জলিলের সেলুন আর বসত ঘর মুহুর্তের মধ্যে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়। ১৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা থেকে ভেটখালী পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্ত করার লক্ষ্যে দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। এই উচ্ছেদ অভিযানে জলিলের পরিবারের মত শ্যামনগর বাস টার্মিনালের সামনে বসবাসকারী অনেকেই সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। আর এক সেলুনের দোকানদার নবী হোসেনের গল্পটাও একই রকম।
চা বিক্রেতা মনো বেগম ও জরিনা বেগম রাস্তার পাশে খুপড়ি দোকানে চা বিক্রি করে সংসার চালাতো। একসাথে চা-এর দোকান আর মাথার উপরের ছাউনি হারিয়ে এদের দুই পরিবারই পথে বসেছে।
বাড়িতে বাড়িতে ছুটো কাজ করে রুনা আক্তার। সড়ক ও জনপদ বিভাগ তার মাথার উপরের ছাউনি কেঁড়ে নিয়ে করেছে গৃহহীন। এই উচ্ছেদ অভিযানের সময় বংশিপুরে দেয়াল চাপা পড়ে গর্ভবতী গরু মারা যাওয়ার ঘটনাটিও সকলের হৃদয় স্পর্শ করেছিল।
তবে এই উচ্ছেদ অভিযানে সহায় সম্বলহীনদের একমাত্র আশ্রয় স্থল ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হলেও ভাঙা হয়নি অনেক প্রভাবশালীদের স্থাপনা।
শ্যামনগর পৌরসভার ক্রিমসন রোজেলা সীফুড লিঃ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভাঙা হয়নি এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির দুই পাশের স্থাপনায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের সার্ভেয়ারের লাল দাগ দেয়া ক্রস চিহ্ন পর্যন্ত ভেকু দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ ক্রিমসন রোজেলা সীফুড লিঃ এর বিল্ডিংটির ১২ ফুটের মত সরকারি জায়গার মধ্যে থাকলেও বিল্ডিংটিতে একটু আঘাতও করা হয়নি এবং সেখানে কোন লাল চিহ্ন দেখা যায়নি। তথ্য সংগ্রহের জন্য ছবি তুলতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হন।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের সার্ভেয়ার মোঃ সোহেল রানা বলেন “রাস্তার দুই পাশের সরকারি জায়গায় কোন স্থাপনা থাকবে না। যে পর্যন্ত ভাঙা হবে আমরা লাল দাগ দিয়ে সে পর্যন্ত চিহ্ন করে দিয়েছি। কেউ নিজ উদ্যোগে না ভাঙলে আমরা ভেঙে দিচ্ছি। কোনো গেট বন্ধ থাকলে সামনের দেয়ালে লিখে দিয়েছি কত ফুট পর্যন্ত ভাঙতে হবে।”
ক্রিমসন রোজেলা সীফুড লিঃ এবং জামান ট্রেডার্সের বিষয়ে তিনি বলেন, “নির্বাহী ম্যাজিট্রেটের নিকট থেকে তারা সময় নিয়েছেন।”
এ বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরার সড়ক ও জনপদের (সওজ) নির্বাহী ম্যাজিট্রেট আনোয়ার পারভেজকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
এদিকে সড়ক ও জনপদ (সওজ) এর কর্মকর্তাদের এমন দ্বিচারিতায় ক্ষুব্ধ শ্যামনগরের সাধারণ মানুষ।
সেচ্ছাসেবী সংগঠন শরুব ইয়ুথ টিমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জান্নাতুন নাইম বলেন, “রাস্তার দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছে আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু সড়ক ও জনপদ (সওজ) এর কর্মকর্তাদের এমন বৈষম্য মূলক আচরণ কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।”
খুলনা গেজেট/এনএম

