‘মাজায় আর কুলাচ্ছে না, ঝাঁকি খাতি খাতি জীবন শেষ। কিছুদিন পর পর ডাক্তারের কাছে যাতি হচ্ছে। ভ্যানেরও অবস্থাও বেহাল। প্রতিদিন ভ্যানগাড়ি মেরামতের জন্যি গ্যারেজে নিতি হচ্ছে। আজ টায়ার নষ্ট, বাল্বটিউব নষ্টতো কাল টিউব নষ্ট, পরশুদিন চাকা টাল, মানে প্রতিদিন একটা না একটা ঝামেলা লাইগে আছে। গাড়ির পিছনে টাকা খরচ করতি করতি মইরে গেলাম। ঝাঁকুনির কারণে প্যাসেঞ্জার কেউ ভ্যান গাড়িতে উঠতি চাই না। আয় রোজগার একেবারে কুমে গেছে। সংসার চালাতি পারতিছিনে। রাস্তা সুমান থাকলি গাড়ি চালায় আরাম পাতাম, প্যাসেঞ্জারেও ওঠে। মিল কলকারখানা সব বন্ধ। কি আর করব। কষ্ট হলিও ভ্যান গাড়ি চালায় খাতি হবে।”
ফুলবাড়িগেট-কুয়েট সংযোগ সড়কের প্রবেশদ্বারে ইজিবাইক স্ট্যান্ডে নিজ ভ্যানে বসে একনাগাড়ে কথাগুলো বললেন ভ্যানচালক মোঃ শহীদ হাওলাদার। শহীদ হাওলাদারের মতো আড়াই শতাধিক ইজিবাইক, ভ্যান এবং রিকশাচালক রয়েছেন। যারা প্রতিদিন ফুলবাড়িগেট থেকে কুয়েট সংযোগ সড়ক এবং পাঁকারমাথা হয়ে টেলিগাতী বাইপাস বরইতলা ঘাট পর্যন্ত যাত্রী এবং মালপত্র আনা নেওয়া করে থাকে। এছাড়া সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন বাস, ট্রাক, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, মালবাহী গাড়ি এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের আনা নেওয়ার ভ্যান যাতায়াত করে থাকে।
দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র ৭ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী, ১১ শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যাতায়াত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণগুলো চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। এছাড়া সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ১১ শতাধিক, প্রতিভা প্রি-ক্যাডেট স্কুল ও মিজান একাডেমীর ৬ শতাধিক, খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সহস্রাধিক, খুলনা মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাড়ে তিন শতাধিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দু’শতাধিক, খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী-অভিভাবক, প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী, বিএড, এমএড, মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে থাকে শলুয়া রংপুর এবং টেলিগাতী এলাকার ৫ সহস্রাধিক মানুষের জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া সড়কটির দু’পাশে অসংখ্য ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং দোকানপাট রয়েছে।
সড়কটির ফুলবাড়িগেট হতে টেলিগাতী পাঁকারমাথা পর্যন্ত দুরবস্থার কারণে প্রতিদিন ৫ শতাধিক যানবাহনসহ, ১৫ সহস্রাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সড়কের দুরাবস্থার কারণে মাতৃত্বকালীন কোন মহিলা সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে পারছে না।
জানা যায়, সড়কটির ফুলবাড়িগেট হতে কুয়েট মেইনগেট হয়ে ল্যাবরেটরি হাই স্কুল পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণ, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক সিআরবি প্রজেক্ট-২’র আওতায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির আধুনিকায়নের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কার্যাদেশ অনুযায়ী সড়কটির আধুনিকায়নের কাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। দু’দফা সময় বাড়ানোর পর মাত্র ১ হাজার ১৮৮ মিটার সড়কের আধুনিকায়নের কাজ তিন বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ভাঙাচোরা সড়কটি দিয়ে যাতায়াতে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগের মাত্রা দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায়। বর্তমানে সড়কটির কাজ বন্ধ রয়েছে। টানা তিন বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের প্রধান সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তাগিদও কর্ণপাত করছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এবিএম মামুনুর রশিদ।
অন্যদিকে গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল হতে টেলিগাতী পাঁকারমাথা পর্যন্ত মাত্র ৪০০ মিটার সড়ক সংস্কারের কাজ গত এক বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। সড়কের মাঝখানে বেশ কয়েকটি বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভ্যান ইজিবাইক, সাইকেল আরোহীরা প্রায়শই গর্তের ভিতর পড়ে দুর্ঘটনায় শিকার হচ্ছে। দু’পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলে সড়কের উপর হাঁটু পানি জমে। তখন যানবাহন এবং পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগের মাত্রা দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায় ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দিঘলিয়া উপজেলার আওতাধীন ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার কাজ করছেন আলমগীর ফকির নামে জনৈক ঠিকাদার। দু’হাত বদলের পর তিনি কাজটি পেয়েছেন। গত তিন মাস ধরে সংস্কারের কাজ বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ শেষ হবে কেউ বলতে পারছেন না। অভিযোগ রয়েছে, সড়কটির সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রকৌশলীর তাগিদে কর্ণপাত করছেন না ওই ঠিকাদার।
খুলনা গেজেট/এনএম

