বৃহস্পতিবার । ২রা অক্টোবর, ২০২৫ । ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩২

বস্তা ধুয়ে সংসার চলে মমিন-পারুল দম্পতির

মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ

ব্যতিক্রমধর্মী পেশা। সিমেন্টের বস্তায় জমাট বাধা গুড়ো সিমেন্ট ধুয়ে তা ব্যবহার উপযোগী করা। এটা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে মোমিন দম্পতি। ভৈরব নদে দুপুর থেকে বেলা গড়িয়ে যাওয়া পর্যন্ত এ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে তাঁরা দু’জন। প্রতিদিনেই কামাই গড়ে ৬০০ টাকা। পেট ভরে ভাত খায় তারা। ধার-কর্য করে না। সঞ্চয় রাখে সন্তানের ভবিষ্যত, ঈদ উৎসব ও রোজার জন্য।

১৬ বছর ধরে নগরীর ভৈরব নদের ৫ নম্বর ঘাটে এ কাজের মাধ্যমে সংসার চালান এ দম্পতি। তিন জনের সংসার। জীবিকার তাগিদে পাইকগাছা থেকে খুলনায় পাড়ি দেন দেড় যুগ আগে।

তেজদীপ্ত সূর্যের সোনালী রোদে বিশ্রামের জন্য শীতল আশ্রয় খুঁজতে ব্যস্ত পথিক। এরমধ্যেই ভৈরব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে চোখে পড়ে জনাকয়েক নদের জলে হেলেদুলে কাজে মনোযোগী। কিছুটা দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে শিল্পীর হাতের নিপুণ আর্ট।

কয়েকজনের মধ্যে চোখে পড়ে এ দম্পতির। নিকটে গিয়ে ক্ষণিকের জন্য কথা হয় তাঁদের সাথে। তারা জানান, শাহ আলম বেপারী পাওয়ার হাউজ মোড় থেকে এ বস্তা ক্রয় করে তাঁদের কাছে পরিপাটি করতে দেন। সেগুলো তাঁরা নিয়ে আসে।

এক হাজার বস্তা খোলা এবং ধোয়ার জন্য ৬০০ টাকা মজুরি পায়। একমাত্র আদরের কণ্যা বিবাহিত, পুত্র সন্তান কদম তলার মজুরির কাজ করে।

পারুল বলেন, ৫ নম্বর ঘাটের মধ্যপাড়ায় আমাদের বসবাস। প্রতিদিন কাজ করে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হলেও সংসারে ৩০০ টাকার বেশি খরচ হয়। আজ আয় হয়েছে ৩৬০ টাকা। বাজারের যা দাম তাতে খুব কষ্টে জীবন-যাপন করতে হয়। এই ইনকাম থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় রাখতে হয়, কেননা কখন কি বিপদাপদ আসে বলা যায় না।

তারা জানান, পানিতে দেড় থেকে দুই-আড়াই ঘন্টা থাকতে হয় জোয়ারের সময়। এ কাজ করতে হাত-পায়ের আঙুল খোয়া যায়। কাগজ পুড়িয়ে তেল বানিয়ে হাত ও পায়ের খেয়ে যাওয়া স্থানে লাগায়।

জীবিকা নির্বাহের জন্য স্বজনদের কাছে মুখাপেক্ষী হতে হয় না, হাত পাততে হয় না। ঘরের কোণে কাঁথার ফাঁকে জমা থাকে ৫০/১০০/৫০০ টাকার নতুন নোট।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন