আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোতেও চলছে ভোটের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি’র দেশের বিভিন্ন আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে তাদের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু খুলনা অঞ্চলের আসনগুলোতে। বিশেষ করে খুলনার ৬টি আসনে প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই প্রার্থীরাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। চূড়ান্ত ভোটের আগে দলের মধ্যেই প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুলনার দাকোপ-বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে খুলনা-১ আসনে বিগত ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী ছিলেন আমীর এজাজ খান। আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে বিবেচিত ওই এলাকায় বিএনপি’র কোনো নেতাই নির্বাচনের সাহস করতেন না। তখন থেকেই আসনটিতে কাজ করছেন আমীর এজাজ। অভ্যুত্থানের পর এলাকায় আরও বেশি সক্রিয় হয়েছেন তিনি। প্রায় প্রতি সপ্তাহে নির্বাচনী আসনের কোনো না কোনো এলাকায় কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় তাকে।
তবে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিলে কিছুটা চাপে পড়েন আমীর এজাজ। সেই চাপ নিয়েই ভোটের মাঠে আধিপত্য ধরে রেখেছেন তিনি।
আসনটিতে মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি জিয়াউর রহমান পাপুল। তিনিও নিয়মিত নির্বাচনী প্রচারণামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তার পক্ষে জেলা বিএনপি’র অনেক নেতা প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। দুই নেতাই মনোনয়নের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।
মর্যাদার আসন হিসেবে বিবেচিত খুলনা-২ আসনে প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে জটিল সমীকরণের মুখে পড়েছে বিএনপি। খুলনা মহানগর বিএনপি’র বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন প্রার্থী হতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছেন এই আসনের সাবেক এমপি ও খুলনা মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বিভেদের রাজনীতিতে এই দুই নেতা দলের দুটি অংশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর মধ্যে বিএনপি’র আরেকটি অংশ আসনটিতে জিয়া পরিবারের কাউকে প্রার্থী করার দাবি তুলছেন।
খালিশপুর, দৌলতপুর ও আড়ংঘাটা-খানজাহান আলী থানার একাংশ নিয়ে গঠিত খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই তৎপর বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি’র বর্তমান কমিটির সব নেতাই তার অনুসারী। এলাকায় তার প্রচারণা চলছে জোরেশোরে।
তবে খুলনা মহানগর বিএনপি’র আগের কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলামও আসনটি থেকে প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে সাবেক কমিটির নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছেন।
রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসনে দলের কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন তিনি।
আসনটিতে বিএনপি’র প্রার্থী হতে কাজ করছেন যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মল্লিক। সম্প্রতি তিনি এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি ও বিসিবির সাবেক পরিচালক আলী আসগর লবি। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনায় এসে তার পক্ষে কাজ করতে অন্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশে অনেকেই প্রার্থী হওয়ার তৎপরতা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি শফি মোহাম্মদ খান। আলী আজগর লবির পাশাপাশি তাকেও এলাকায় প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে।
কয়রা-পাইকগাছা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী ও বাসসের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন। প্রায়ই তারা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এ আসনে বিএনপি’র জেলা নেতারা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তাদের তেমন তৎপরতা দেখা যায় না।
খুলনা গেজেট/এনএম