নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশের পর সাতক্ষীরার চারটি আসনের মধ্যে বদলে গেছে সাতক্ষীরা-২ ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের সীমানা। এতে সাতক্ষীরা-১ আসনের (তালা-কলারোয়া) সীমানা অপরিবর্তিত থাকলেও ২০০১ সালের নির্বাচনের সীমানায় ফিরেছে সাতক্ষীরা-৪ আসন (তৎকালীন সাতক্ষীরা-৫)। আর এটা করতে গিয়ে সীমানার পরিবর্তন ঘটেছে জেলার তিনটি আসনে।
ফলে ইসির চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী সাতক্ষীরার তিনটি আসনে দেখা দিয়েছে ভোটের নতুন সমীকরণ। এতে করে ভোটার বেড়েছে সাতক্ষীরা-২ আসনে এবং কমেছে সাতক্ষীরা-৪ আসনে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সাতক্ষীরা-২ ও ৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীসহ ভোটারদের মাঝে।
সূত্র মতে, স্বাধীনতার পর থেকে সাতক্ষীরায় ৫টি সংসদীয় আসন ছিল। ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাতক্ষীরা থেকে একটি আসন কমিয়ে চারটি করা হয়। তখন এই চারটি আসনের মধ্যে তালা-কলারোয়া নিয়ে সাতক্ষীরা-১, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নিয়ে সাতক্ষীরা-২, দেবহাটা, আশাশুনি ও কালিগঞ্জের চারটি ইউনিয়ন নিয়ে সাতক্ষীরা-৩ এবং শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের আটটি ইউনিয়ন নিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এবারের চূড়ান্ত গেজেটে সাতক্ষীরা-১ আসনের সীমানা বহাল রেখে সাতক্ষীরা সদরের সাথে দেবহাটাকে যুক্ত করে সাতক্ষীরা-২ আসন, আশাশুনির সাথে কালিগঞ্জকে যুক্ত করে সাতক্ষীরা-৩ আসন ও শুধুমাত্র শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এ হিসেবে সাতক্ষীরা-১ আসনের বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯২ হাজার ১২৯। সাতক্ষীরা-২ আসনের ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৩২ হাজার ৬৮৮। সাতক্ষীরা-৩ আসনের ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩৭ এবং সাতক্ষীরা-৪ আসনের ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩৬।
এদিকে, সাতক্ষীরার চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে সীমানা পরিবর্তনের ঘটনায় সাতক্ষীরা-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা খুশি হলেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সাতক্ষীরা-২ ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক মেয়র তানজিন আহমেদ চিশতি বলেন, “সাতক্ষীরা-২ আসনের সাথে দেবহাটাকে যুক্ত করে অন্যায় করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলা নিয়ে সাতক্ষীরা-২ আসনের সীমানা ঠিক ছিল। পরিবর্তন করা হয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। এটা নিয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।”
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, “আমাদের দাবি ছিল সাতক্ষীরার পাঁচটি আসন ফিরে পাওয়া। তা তো হলোই না, বরং নির্বাচনের কমিশনের সিদ্ধান্তে আমাদের জনস্বার্থ বিঘিœত হবে। কারণ আগে যখন পাঁচটি আসন ছিল, তখন দীর্ঘ সময় একরকম সম্পর্ক গড়ে উঠলো। আবার যখন আসন কমিয়ে চারটি করা হলো, তখনকার সীমানা অনুযায়ীও একটা সম্পর্ক গড়ে উঠলো।”
এ প্রসঙ্গে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডাঃ শহিদুল আলম বলেন, “সর্বশেষ প্রকাশিত গেজেটের সীমানা বিন্যাসের চেয়ে পূর্ববর্তী ২০০৮ সালের সীমানা বিন্যাসটি মোটামুটি ভালো ছিল। ওইটাতে জেলার সংসদীয় আসনগুলোর ভোটার সংখ্যার মোটামুটি একটা সামঞ্জস্য ছিল। এখন জেলার একটি আসনে ভোটার সংখ্যা অত্যধিক, আবার একটি আসনে অনেক কম।” এভাবে সীমানা বিন্যাস যুক্তিযুক্ত হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অপরদিকে, পূর্ববর্তী সীমানায় ফিরে যাওয়ায় (তৎকালীন সাতক্ষীরা-৫, শ্যামনগর) সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাধারণ মানুষসহ রাজনীতিকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম