সম্প্রতি সময়ে সুন্দরবনে জলদস্যুদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ ধরা জেলেদেরকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে আদায় করছে মোট অঙ্কের টাকা। বিকাশের মাধ্যমে দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করার পর মুক্তি মিলছে অপহৃতদের। ফলে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে জীবিকার টানে সুন্দরবনে ঢোকা জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনৈক অয়েজকুরুনি গাজীর জেলে হিসেবে গত মঙ্গলবার শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের নুর হোসেনের ছেলে আব্দুস সালাম (২৫) ও ভেটখালী নুতনঘেরি গ্রামের কৃষ্ণ কাহারের ছেলে বিজয় কাহার (৩৮) মাছ ধরতে সুন্দরবনে যায়। দু’দিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে পায়রাটুনি খালে জাল বিছানোর সময় পাঁচ সদস্যের জলদস্যুর একটি দল সেখান থেকে বিজয় কাহার ও আব্দুস সালামকে অপহরণ করে। জলদুস্যুরা তাদের মুক্তির জন্য মাথাপিছু মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ হাজার করে টাকা দাবি করে।
এঘটনার পর ৫ সেপ্টেম্বর রাতে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণের ৩৬ হাজার টাকা পরিশোধের পর জলদস্যুরা ৬ সেপ্টেম্বর ভোরে আব্দুস সালামকে মুক্তি দেয়। ঐদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সুন্দরবন ফেরত অপর জেলেদের নৌকাযোগে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন।
ফিরে আসা জেলে আব্দুস সালামের পিতা নুর হোসেন জানান, একদিন পরে জিম্মি জেলেদের পরিবারের কাছে কাছে মোবাইলে যোগাযোগ করে মুক্তিপণ বাবদ মাথাপিছু ৫০ হাজার করে টাকা দাবি করা হয়। পরবর্তীতে অনুনয়বিনয় করে ছেলের মুক্তিপণ বাবদ ৩৫ হাজার টাকায় জলদস্যুদের রাজি করাতে সম্মত হন। পরে টাকা পরিশোধের পর তাকে ছেড়ে দেয় দস্যুরা।
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা অপর জেলে বিজয় কাহারের পিতা কৃষ্ণ কাহার জানান, শনিবার পর্যন্ত তিনি মুক্তিপণের টাকা সংগ্রহ করতে পারেননি। ছেলের মুক্তিপণ বাবদ জলদস্যুদের দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা ০১৯১৬৮১৩৬৪৯ নম্বরে বিকাশ করতে বলেছেন তারা।
ফিরে আসা জেলে আব্দুস সালাম জানায়, পাঁচ সদস্যের জলদস্যু দলটির কাছে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। তারা ছোট একটি ডিঙি নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের মধ্যে দস্যুতা করছে।
এদিকে এর আগে গত ২৫ আগস্ট ও ২৬ আগস্ট দুই দফায় সুন্দরবনের দাড়গাং নদী সংলগ্ন খাল থেকে চারজন ও হোগল ডোকরা খাল এবং কালির খাল থেকে তিনজনসহ মোট ৭ জেলেকে অপহরণ করে জলদস্যুরা। এরা হলেন, শ্যামনগরের পার্শেখালি এলাকার ইব্রাহীম সর্দার, আব্দুল হাকিম, সুজিত মুন্ডা, কালিঞ্চি এলাকার সাত্তার গজী, আকিনুর, কৈখালীর বুলবুল গাজি ও রমজাননগরে তারানীপুর গ্রামের আরাফাত হোসেন। পরে মুক্তিপণ দিয়ে তারা সবাই ফিরে আসে।
জলদস্যুদের দাবিকৃত মুক্তিপণের ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ফিরে আসা জেলে সুজন মুন্ডা জানান, সুন্দরবনে মুন্না বাহিনী নামে নতুন একটি বনদস্যু বাহিনী এসব জেলেদের অপহরণ করেছে।
প্রথম চালান মাছ ধরে লোকালয়ে ফিরে আসা জেলে আবুল হোসেন জানান, তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে এক তারিখে আমরা সুন্দরবনে ঢুকেছিলাম। কিন্তু জলদস্যুদের অপতৎপরতার কারণে বেশিদিন থাকতে পারলাম না। সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরার সময় সবসময় ভয় ভয়ে থাকতে হয়। তিনি সুন্দরবনে জলদস্যুদের অপতৎপরতা রোধে বন বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ ফজলুল হক জানান, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকাসহ যেসব এলাকায় জেলেরা মাছ ধরে সে সমস্ত এলাকায় বন বিভাগ ও স্মার্ট পেট্রোল টিমের পক্ষ থেকে টহল জোরদার করা হয়েছে। জেলেদেরকে নজরে রাখার জন্য টিমের সদস্যদেরকে বলা হয়েছে।
এরপরও কোন জেলে অপহরণের শিকার হলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে কিছুই জানানো হয় না। নিরাপত্তার স্বার্থে তারা আমাদের কাছে গোপন রাখে। সঠিক তথ্য পেলে বনবিভাগ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করতে পারে বলে জানা নেই বোন কর্মকর্তা।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির মোল্লা জানান, কোন জেলে অপহরণ হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আমাদেরকে কিছুই জানায় না। অপহৃত জেলেদের বিপদ হতে পারে এই ভেবে তাদের অভিভাবকরা টাকা দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করে। এরপরে অভিযোগ পেলে পুলিশ অপহৃতদের উদ্ধারের পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
তিনি আরো বলেন, “সুন্দরবনে জেলেদের অপহরণের বিষয়টি আমরা তৃতীয় ও চতুর্থ পক্ষের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত একটা ফলাফল পাওয়া যাবে।
খুলনা গেজেট/এনএম