চাঁদের পূর্ণগ্রাসে বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য দেখল মানুষ

গেজেট ডেস্ক

চাঁদ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। গুহাজীবন থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ যুগেও চাঁদ তার মায়াবী আলোয় মুগ্ধতা ছড়ায়। পঞ্চমীর চাঁদ ডুবে গেলে কবির ‘মরিবার সাধ জাগে’। ক্ষুধার্ত কবির কাছে পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে ওঠে ‘ঝলসানো রুটি’। ধর্ম-সংস্কৃতিসহ নানা আবহের মধ্যেও জড়িয়ে আছে চাঁদ। কবিতা, বিজ্ঞান, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে হাজার বছর ধরে স্বপ্নজাল বুনে গেছে পৃথিবীর এ নিকটতম প্রতিবেশী।

নিজস্ব আলোহীন চাঁদ বছরের নানা সময় হাজির হয় নানা রঙে। চাঁদের দুটি রূপ– একটি পূর্ণিমার ঝলমলে রুপালি আলো, আরেকটি অমাবস্যার ঘন কালো। কখনও লালসহ নানা রঙেও দেখা যায় পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহকে।

শনিবার রাতে এমনই বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য দেখা গেল। ছিল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। এটি নিয়মিত চন্দ্রগ্রহণের মতো নয়। এদিন চাঁদ চন্দ্রপ্রেমিকদের চোখে ধরা দেয় রক্তিম আভায়, যা ‘ব্লাড মুন’ নামে পরিচিত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকায় রাত ৯টা ২৭ মিনিটে চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়। রাত ১০টা ২৭ মিনিটে আংশিক গ্রহণ শুরুর পর চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যেতে থাকে। পূর্ণগ্রাস শুরু হয় রাত ১১টা ৩০ মিনিটে, যা চলে রাত ১২টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত। এ সময় চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ার আওতায় চলে আসে। তখন এটি লালচে বা তাম্রবর্ণ ধারণ করে। ১২টা ১১ মিনিটে গ্রহণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। গ্রহণ থেকে চাঁদ সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে স্বাভাবিক রূপে ফিরবে ভোররাত ২টা ৫৬ মিনিটে।

কেন চাঁদের এ রক্তিম বর্ণ

যখন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হয়, তখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে যাওয়া সূর্যের আলোর নীল অংশটি বিচ্ছুরিত হয়ে যায়। কিন্তু লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় তা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে চন্দ্রপৃষ্ঠে গিয়ে পড়ে। ফলে চাঁদকে দেখতে লালচে বা তামাটে মনে হয়। এ রক্তিম বর্ণের কারণেই একে ‘ব্লাড মুন’ বলা হয়।

বিজ্ঞানীরা জানান, যখন সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ একই সরলরেখায় অবস্থান করে এবং পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে চলে আসে, তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ে। ফলে চন্দ্রগ্রহণ হয়। পৃথিবীর ছায়া চাঁদকে পুরোপুরি ঢেকে দিলে তাকে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ বলে।

রক্তিম চাঁদ দেখতে আয়োজন

গতকাল ঢাকায় ব্লাড মুন অবলোকনে ছিল নানা আয়োজন। ঢাকার কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠে বিশেষ আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। এখানে আগ্রহীরা টেলিস্কোপ দিয়ে চন্দ্রগ্রহণ উপভোগ করেন। এ ছাড়া জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর বিজ্ঞান বক্তৃতা ও টেলিস্কোপ দিয়ে চন্দ্রগ্রহণ দেখার আয়োজন করেছিল।

চাঁদের আরও যত রূপ

পূর্ণিমার চাঁদের আরও নানা নাম আছে। চাঁদ যখন তার কক্ষপথে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে, তখন পূর্ণিমা হয়। তখন তাকে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বড় ও উজ্জ্বল দেখায়। এ ঘটনাকে ‘সুপারমুন’ বলে। সাধারণত বছরে ১২টি পূর্ণিমা হয়। কোনো বছরে ১৩টিও হতে পারে। তখন এক মাসে দুটি পূর্ণিমা পড়ে। দ্বিতীয়টিকে বলা হয় ‘ব্লু মুন’। এটা দু-তিন বছর পরপর ঘটে। আর যখন একসঙ্গে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ (ব্লাড মুন), সুপারমুন আর ব্লু মুন ঘটে, তখন সেটিকে বলা হয়, সুপার ব্লাড ব্লু মুন। এমনটা বহু বছর পরপর দেখা যায়।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন