খুলনায় বেসরকারি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি দখল, বিধিবর্হিভূত নিয়োগসহ চলমান অস্থিরতা নিরসনে তিনটি পক্ষকে ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সোমবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর কমিশন ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় যোগ দিতে খুলনা ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের সদস্যরা।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানা গেছে, অভ্যুত্থানের পর গত ২১ মে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখলের ঘটনা ঘটে। মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতার ইন্ধনে অনুমোদিত ট্রাস্টি না হয়েও নিজেকে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। সৈয়দ হাফিজুর রহমান নামের আরেকজনকে করা হয় ট্রাস্টের সদস্য সচিব। পরে ছাত্রদের দিয়ে পরিকল্পিত মব তৈরি করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে। একই কায়দায় বিদায় করানো হয় রেজিস্ট্রারকে।
এরপর মিজানুর রহমান ও হাফিজুর রহমান মিলে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ বিভিন্ন পদে পছন্দের লোকজন নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট্রিরা কেউ এখন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রবেশ করতে পারছেন না।
এদিকে অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দখল ও পরিচালনা করায় ইউজিসির বিরুদ্ধে মামলা করেছে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক চৌধুরী। বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন করায় কয়েকটি ব্যাংকে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর খুলনার প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন পায় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য ছিলেন ১৭ জন। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন খুলনা-৩ আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
সূত্রটি জানায়, অভ্যুত্থানের পর খালেক ও কামাল আত্মগোপনে চলে গেলে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় সিরাজুল হক চৌধুরীকে। ভাইস চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত করা হয়। বোর্ডে বিএনপি সমর্থিত সদস্যের সংখ্যা বাড়াতে গতবছর ১০ ডিসেম্বর বোর্ডের ৬৯তম সভায় মিজানুর রহমান নামের নতুন একজনকে ট্রাস্টি সদস্য করেন সিরাজুল হক। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি আজিজুল হক ও সৈয়দ হাফিজুর রহমান নামের আরও দু’জনকে ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হতে গেলে যৌথমূলধনী কোম্পানি থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। কিন্তু এই ৩ জন তার কিছুই করেননি।
সূত্রটি জানায়, গত মে মাসে লন্ডনে যান সিরাজুল হক চৌধুরী। এই সুযোগে ২১ মে ট্রাস্টি বোর্ডের সভা ডেকে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন মিজানুর রহমান। হাফিজুর রহমানকে করেন বোর্ড সদস্য সচিব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ মারুফুর রহমানকে করা হয় পরিচালক (লিঁয়াজো)। মূলত এরপর থেকেই ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেন মিজানুর রহমান। ট্রাস্টি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম আজাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ ও পবিত্র কুমার সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির সমাবেশে পুলিশী হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি করা হয়।
ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন, সব বৈধ কাগজ আমার কাছে রয়েছে। একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয় দখলের প্রতিকার না হলে এমন আরও ঘটনা ঘটবে। আমরা ইউজিসির কাছে এর প্রতিকার চাই।
মিজানুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ ট্রাস্টির অনুরোধ আমি চেয়ারম্যান হয়েছি। ইউজিসিও অনুমোদন দিয়েছে। বিষয়গুলো কাল তুলে ধরবো।
উদ্যোক্তা ট্রাস্টি তৌহিদুল ইসলাম আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি খুলনাবাসীর সম্পদ। জমিজমার মতো বিশ্ববিদ্যালয়টি যেভাবে দখল হয়েছে, তা খারাপ নজির। এর প্রতিকার প্রয়োজন।
ইউজিসির পরিচালক ড. সুলতান মাহমুদ বলেন, তিন পক্ষকে তাদের বৈধ কাগজ নিয়ে আসতে বলেছি। বৈঠকের পর বিস্তারিত জানানো হবে।
খুলনা গেজেট/হিমালয়/এএজে