খুলনা, বাংলাদেশ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  নগরীতে গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আহত, ছুরিকাঘাতে যুবক জখম
  করোনা ডেঙ্গুতে মৃত্যু অব্যাহত, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা
  পিটিয়ে বিএনপি নেতার চোখ নষ্টের মামলা : খুলনা সদর থানার সাবেক ওসি হাসান আল মামুনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

উপাচার্য নেই, বিল ছাড় না হওয়ায় কুয়েটের ৬’শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বন্ধের পথে

একরামুল হোসেন লিপু

উপাচার্য না থাকায় খুলনা প্রকৌশলে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ‘র চলমান উন্নয়ন কাজের বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এতে প্রায়  ৬’শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

একই সঙ্গে উপাচার্যের অনুমোদন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি অর্থবছরের রাজস্ব খাতে বরাদ্দকৃত অব্যায়িত অর্থ খরচ করা সম্ভব হচ্ছ না। ৩০ জুনের মধ্যে এ অর্থ খরচ করতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক জটিলতা তৈরির আশংকা দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জানা গেছে, কুয়েটে ১০ তলা নতুন একাডেমিক ভবন, ১২’শ আসন সম্বলিত ১০ তলা ১ টি ছাত্র হল ও ১ টি ছাত্রী হল, পাঁচতলা ১ টি ফরেন স্টুডেন্ট ডরমেটরি এন্ড ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি ভবন,  শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য একটি ১০ তলা আবাসিক ভবন, পাঁচতলা বিশিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য একটি ডরমেটরি ভবন, গ্রীন বাউন্ডারি ওয়াল, ইন্টারনাল আরসিসি রোড নির্মাণ, সোলার সিস্টেম স্থাপনসহ সাব স্টেশন নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন, রিটেনিং ওয়াল, কভার স্নাবসহ সাবফেস ড্রেন নির্মাণসহ বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এসবের আর্থিক মূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখা থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের আর্থিক ক্ষমতা উপাচার্যের হাতে । তার স্বাক্ষর ছাড়া এক টাকারও বিল পাস হয় না। গত দুই মাস ধরে তার স্বাক্ষরের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১’শ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন- ভাতা, চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের বিলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় আর্থিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সুরাহা সম্ভব নয়।

উপাচার্যের স্বাক্ষরের অভাবে মে মাসের বেতনসহ পবিত্র ঈদুল আযহার উৎসব ভাতাও পায়নি কোন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর্থিক সংকটের কারণে এ সকল শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকাংশই ঈদুল আযহার আনন্দ ঠিকমতো উদযাপন করতে পারেনি। ৪ জুন ভিসি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ বিভাগ থেকে। ২৬ জুন আবেদনের শেষ সময়। শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের চলতি মাসেরও বেতন নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

নতুন ১০ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্যা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড এসএসএল(জেভি) ‘র প্রকৌশলী  মোঃ সাইফুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘রমজানের ঈদের আগে আমরা সর্বশেষ বিল পেয়েছি। এরপর থেকে আর কোন বিল পাইনি। দশ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ অন্য একটি কাজ মিলিয়ে আমাদের দেড়শ’ কোটি টাকার কাজ চলছে। কোম্পানি ধার দেনা করে কোনোমতে কাজ চলমান রেখেছে। বিল না পেলে কাজের গতিও বাড়াতে পারছেনা। কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতনও দিতে পারছে না’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক ড. জুলফিকার হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। উপাচার্যের স্বাক্ষরের অভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিল পরিশোধ বন্ধ রয়েছে। ৩০ জুন চলতি অর্থ বছর শেষ হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের বিল না পেলে তারা কাজ বন্ধ করে দিবে, এমন আভাস দিয়েছে। তিনি বলেন, মাছুদ স্যারকে অব্যাহতি দেয়ার পর, অন্তবর্তীকালীন উপাচার্য উন্নয়ন কাজের কোন বিলে স্বাক্ষর করেননি। দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে”।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এবিএম মামুনুর রশিদ বলেন, ‘উপাচার্য না থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত ঠিকাদারগণকে সময়মতো বিল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত প্রায় দুই মাস ধরে তাদের কাজের বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে চলমান উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া চলতি অর্থ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব খাতে বরাদ্দকৃত অব্যয়িত অর্থ খরচ করতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয় বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে’।

উল্লেখ্য, শিক্ষকদের অনাস্থা ও আন্দোলনের মুখে ১৯ মে অন্তবর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হযরত আলী দাপ্তরিক কাজের কথা বলে ঢাকার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এর দুইদিন পর ২২ মে রেজিস্টারের মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে তিনি পদত্যাগের কথা জানান। সেই থেকে টানা প্রায় দুই মাস অভিভাবকহীন কুয়েট।

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৫ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ- উপাচার্য প্রফেসর ড. শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!