কুরবানি অর্থ নৈকট্য, উৎসর্গ, বিসর্জন ও ত্যাগ ইত্যাদি। কুরবানি আমাদের সামনে নিয়ে আসে ত্যাগের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলামের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যও বটে। কুরবানি সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, আমি নির্ধারণ করেছি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানির নিয়ম যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তুও উপরে (সূরা হজ্জ: ৩৪)।

শরীয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জিলহজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ এই তিন দিন আল্লাহর নামে হালাল পশু নির্দিষ্ট নিয়মে জবেহ করার নামই কুরবানি। কুরবানির ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অত্যন্ত জরুরী।

শরীক নির্বাচনে সতর্কতা
শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানি সহীহ হবে না। যদি কেউ আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়ত করে কুরবানি করে তাহলে তার কুরবানি সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে।

কুরবানির পশু নির্বাচনে সতর্কতা
কুরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানি জায়েয নয়। এমন দূর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানি করা জায়েয নয় । যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানি করা জায়েয নয় । যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানি জায়েয নয়। যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানি জায়েয নয় । যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট সে পশু কুরবানি করা জায়েয নয়।

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা
আলী ইবনে আবী তালিব রা. বলেন, আল্লাহর নবী (স.) আমাকে তাঁর (কুরবানির উটের) আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে বলেছিলেন। তিনি কুরবানির পশুর গোশত, চামড়া ও আচ্ছাদনের কাপড় ছদকা করতে আদেশ করেন এবং এর কোনো অংশ কসাইকে দিতে নিষেধ করেন। তিনি বলেছেন, আমরা তাকে (তার পারিশ্রমিক) নিজের পক্ষ থেকে দিব (বুখারী ও মুসলিম)। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।

জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে সতর্কতা
অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ জবাইয়ের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানি সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না।

কুরবানির পশুর বয়সের ব্যাপারে সতর্কতা
উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয়, তাহলে তা দ্বারাও কুরবানি করা জায়েজ। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়স হতে হবে। উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানি যাবে না।

লেখক: অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার সিডনী থেকে

খুলনা গেজেট/এসএইচ