সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। বুধবার ( ২১ মে ) সেনা সদরে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় সেনা সদরের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাগণসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সকল সেনানিবাস থেকে কমান্ডারগণসহ বিভিন্ন পদবির সেনা কর্মকর্তাগণ ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
বুধবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সূত্রে জানা গেছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেনাবাহিনী নিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানান।
সেনাপ্রধান বলেন, দেশে ও বিদেশে সেনা বাহিনীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কথন হচ্ছে। কেউ কেউ আবার সেনা বাহিনীকে উস্কানি দিচ্ছে। এগুলোতে কান না দেওয়ার জন্য তিনি সেনাবাহিনী প্রতিটি সদস্যের প্রতি আহ্বান জানান।
২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মিয়ানমারকে মানবিক করিডোর বা ত্রাণ চ্যানেল সুবিধা প্রদান কিংবা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার প্রসঙ্গ ঐ বৈঠকে আলোচিত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন তথ্য জানা যায়নি। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে নানা তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে। ভারতীয় একাধিক মিডিয়ায় ড. ইউনুস সরকার ও জেনারেল ওয়াকারের মধ্যে জাতীয় ইস্যুতে বিরোধের খবর প্রচার হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজে এসব খবরকে গুজব বলে পোস্ট দেয়া হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাপ্রধানের বক্তব্য বলে টাইপ করা ৯ পৃষ্ঠার একটি বক্তব্যও ভেসে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বুধবারের সভার ব্যাপারে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে বুধবার রাতে আমার দেশ এর সাথে আলাপকালে আইএসপিআর -এর পরিচালক লে. কর্নেল সামি-উদ-দৌলা- চৌধুরী বুধবার সকালের অফিসার্স মিটিংয়ের কথা নিশ্চিত করে জানান, ‘সেনা বাহিনী প্রধান ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ করেছেন। অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন। তিনি এর বেশি কিছু বলতে কিংবা বিভিন্ন গুজবের ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকের শুরু ও সমাপনী বক্তব্য রেখেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার -উজ-জামান। অনুষ্ঠানে ৬ জন সেনা কর্মকর্তা সেনাবাহিনী বর্তমান পরিস্থিতি ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এই ৬ জনের মধ্যে একজন মেজর ও একজন লে. কর্নেল রয়েছেন বলে জানা গেছে। সেনাপ্রধান তাদের বক্তব্য অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং তাদের বক্তব্যের পর তিনি তার মতামত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সূত্রে জানা গেছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় মাঠ পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এজন্য তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক। দেশপ্রেমে তারা সব সময় প্রথম স্থানে উত্তীর্ণ হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইউনিটি শুধু দেশে নয়, বিদেশেও এটির সুনাম রয়েছে। এই ইউনিটি যে কোন মূল্যে ধরে রাখার জন্য তিনি তাগিদ দেন।
তিনি মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বর্তমানে বেসামরিক প্রশাসনকে সেনা বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করছে। সৈনিকরা বিভিন্ন অপারেশনে যাচ্ছে। তারা যাতে কোন পর্যায়ে অপরাধে জড়িত না হয় সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্নস্থানে আন্দোলন চলছে। যারা আন্দোলন করছেন তাদের দাবিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং জনদাবিকে গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসময় তিনি সেনাবাহিনী যাতে জনগণের মুখোমুখি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
সূত্র জানায়, অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর একজন মেজর তার মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মব’ ঠেকাতে জনগণকে আরও সচেতন করতে হবে। পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করতে হবে।
সূত্র: আমার দেশ
খুলনা গেজেট/এএজে