খুলনার বাজারে বোতলজাত ভোজ্য তেলের সংকট দেখিয়ে দোকানীরা ৫-১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন। গত দু’মাস ধরে বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট থাকলেও রোজার সময় আরও প্রকট দেখা দিয়েছে। কিছু দোকানে বোতলজাত ভোজ্যতেল পাওয়া গেলেও তাও চড়া দামে বিক্রি করছেন দোকানীরা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি ভোজ্য তেল বিক্রিতে কোম্পানীরা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। তেল নিতে হলে ১০০ কেজি লবণ ও ৩ বস্তা আটা ধরিয়ে দিচ্ছেন ডিলাররা বলে দোকানীদের অভিযোগ।
নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি লিটার তেলে দোকানীরা ৫-১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন। ১ লিটার বোতলের গায়ে ১৭৫ টাকা লেখা থাকলেও তারা ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দাম বেশী নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়িরা বলছেন- ব্যবসা চালানোর জন্য তেল বিক্রি করতে ডিলারদের কাছ থেকে লবণ ও আটা নিয়ে এ পণ্য নিতে হচ্ছে। এ দুটি পণ্য না নিলে তারা বোতলজাত তেল দিচ্ছেন না। তাছাড়া কয়েকটি কোম্পানীর তেল বাজার থেকে আগে উধাও হয়ে গেছে।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হাসেম স্টোরে তেল কিনতে গিয়েছিলেন রূপসা উপজেলার জোয়ার বাদাল গ্রামের লিটন। তিনি বলেন, ১৫ মিনিট ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেল খুঁজছি। কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি। বাজারে ২ লিটার ও ৫ লিটার তেলের বোতল কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এ দোকানে এসে পুষ্টি কোম্পানীর ১ লিটার তেলের বোতল পেয়েছি। কিন্তু বোতলের গায়ে ১৭৫ টাকা লেখা থাকলেও দোকানদার সেটির মূল্য আমার কাছে ১৮৫ টাকা দাবি করেছেন। ১৭৫ টাকায় তেল দিতে অস্বীকার জানিয়েছেন দোকান মালিক।
দাবির কারণ জানতে দোকান মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাজারে তেলের সংকট রয়েছে। ডিলারদের অগ্রিম টাকা দিলেও তারা ১ মাস পরে মাল দিচ্ছে। তাছাড়া ডিলাররা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য ভিন্ন ফর্দ অবলম্বন করেছেন। ৪ কার্টুন তেল নিলে তাদের কাছ থেকে ১০০ কেজি লবণ ও ৩ বস্তা আটা নিতে হয়। এভাবে পণ্য নিলে আমাদের লস হয়। এক্ষতি পোষানোর জন্য বোতলের লেভেল লেখা মূল্য থেকে ৫- ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। গত ২ মাস ধরে এ সংকট রয়েছে। রোজা শুরুতে এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো বা ঈদের সময়ে তেল পাওয়া যাবে না।
একই চিত্র নগরীর মিস্ত্রিপাড়া বাজার এলাকাতে। এখানে সুমি স্টোরের মালিক আরাফত জানান, গত মাস ভরে কোন তেল পাননি তিনি। কোম্পনীতে তেলের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাজারে তীর, ফ্রেস এবং বসুন্ধরা কোম্পানীর কোন বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। এক সপ্তাহ ধরে দোকানে কোন তেল তুলতে পারেনি।
তিনি বলেন, ১ লিটার, ২ লিটার এবং ৫ লিটার বোতলের কার্টুন কিনলে কোম্পানীর কাছ থেকে লবণ, আটা না হয় পোলাওর চাউল কিনতে হয়। এগুলো না নিলে বিক্রয় প্রতিনিধিরা আমাদের সাথে কোন কথা বলতে চায়না। তাছাড়া বড় বাজারে কিনতে গেলে বোতলের গায়ে লেখা লেভেল থেকে বেশি দরে কিনতে হয়। দোকান চালাতে গেলে বাজার থেকে বেশি দর দিয়ে কিনেও ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ বাজারের ক্রেতা ফিরোজুল ইসলাম বলেন, রমজান মাস এলে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের দেশে রমজানের চিত্র ভিন্ন। ব্যবসায়ীরা তাদের মুনাফা অধিক অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধারনের পন্থা অবলম্বন করেন। বড় বড় ব্যবসায়ীরা বোতলের তেল ড্রামে ভরে তা লুস তেল হিসেবে বিক্রি করছেন।
তিনি আরও বলেন, বাজারে লুস তেলের কোন সংকট নেই। সেটি স্থানভেদে ১৯২-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পবিত্র এ মাসে নিত্যপণ্যের দাম কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বৃদ্ধি করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এএজে