খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  গণঅভ্যুত্থানে ১,৪০১ জন আহতকে ‘জুলাই যোদ্ধা’র স্বীকৃতি জানিয়ে গেজেট প্রকাশ

হল ছেড়েছেন সব শিক্ষার্থী, অশান্ত কুয়েট আপাতত শান্ত

একরামুল হোসেন লিপু

ক্যাম্পাসে আপাতত শুনশান নিরবতা। নেই শিক্ষার্থীদের কোলাহল। আবাসিক হলগুলো নিস্তব্ধ। সব শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই গত ৯ দিনে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা আর অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত, ন্যাক্কারজনক ও দুঃখজনক ঘটনা।

ওইদিন তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ছাত্রদল ও স্থানীয় বিএনপি  নেতাকর্মীদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে  বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয় অনেককে। মারাত্মক আহত অনেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। সন্ত্রাসীদের লাঠির আঘাতে ঐদিন (BECM-২২) ব্যাচের সৌরভ নামে এক শিক্ষার্থীর হাত তিন টুকরো হয়ে যায়। বর্তমানে সে ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর শেখ শরীফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় লাঞ্ছিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। হামলাকারীদের ইটের আঘাতে প্রো-ভিসিসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন।

ঘটনার পর থেকে টানা ৯ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছিল উত্তেজনায় ভরপুর। ভিসি, প্রো-ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীতি নির্ধারকদের পরিস্থিতি সামাল দিতে দুঃশ্চিন্তায় খাওয়া ঘুম এক প্রকার হারাম হয়ে যায়।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারী) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক হল খালির করার মধ্য দিয়ে আপাতত শান্ত হয় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম এ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

সংঘর্ষের ওই ঘটনার পর থেকে ভিসি, প্রো-ভিসি’র পদত্যাগসহ শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবিতে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন, ভিসি’র বাসভবনে তালা লাগানোসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে চোখে লাল কাপড় বেঁধে ক্যাম্পাস শাটডাউন ঘোষণা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি বৃহৎ অংশ। তারা ভিসি, প্রো-ভিসি’র অপসারণ, নতুন নিয়োগসহ ৬ দফা দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার নিকট স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে ২ টি ভাড়া বাসে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

আর ক্যাম্পাসে থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বাকি অংশ সোমবার (২৪ফেব্রুয়ারি) দাবি আদায়ে বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রাখে। শিক্ষার্থীদের ঐ অংশটি মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করা ভিসির বাসভবনে পুনরায় তালা লাগাতে গেলে ভিসির বাসভবনে বৈঠক নেওয়া শিক্ষকদের সাথে তাদের চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ সময় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কিছু সময় ধরে বাকবিতণ্ডটা চলে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ভিসি’র বাসভবনে তালা না লাগিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। একই দিন ভিসি’র বাসভবনে অনুষ্ঠিত ৯৯ তম (জরুরী) সিন্ডিকেট সভায় পরের দিন বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ভ্যাকেন্টের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘোষনার পর  শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক হল ভ্যাকেন্টের প্রতিবাদে রাতে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। হল ভ্যাকান্টের নির্দেশ না মেনে শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করার ঘোষণা দেয়। মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ছিল চরম উত্তেজনাকর একটি দিন। ঐদিন সকাল থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের দৃষ্টি ছিল কুয়েট ক্যাম্পাসের দিকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে গণমাধ্যম কর্মীরা একে একে আসতে শুরু করে ক্যাম্পাসের দিকে। এদিকে হল ভ্যাকেন্টের ঘোষণায় বুধবার সকাল থেকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করে বাড়ি ফিরতে শুরু করলেও কিছু শিক্ষার্থীর হল ত্যাগ না করার ঘটনায় উত্তেজনা রয়ে যায়।

বেলা ১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ তার বাসভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর বল প্রয়োগ না করে তাদেরকে বুঝিয়ে হল থেকে বের করার জন্য আমাদের প্রভোস্ট, শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রদের বুঝিয়ে হল ত্যাগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সফল হয়।

সর্বশেষ গতরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন প্রামানিকের কাজ থেকে জানা যায়, “খানজাহান আলী হল ছাড়া বাকি আবাসিক হলগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। খানজাহান আলী হলে কিছু কাজ থাকায় সেটি এখনও সিলগালা করা হয় হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্র সেখানে অবস্থান করছে না”।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল খোলার পর শিক্ষার্থীদের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের ৯০০ মিটার অরক্ষিত সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অসমাপ্ত কাজ খুবই দ্রুততার সাথে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত খুলনা গেজেটকে বলেন, “ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট থেকে পকেট গেট পর্যন্ত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পকেট থেকে আইটি পার্ক পর্যন্ত বাকি কাজ আগামী ১০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে ইনশাল্লাহ”।

 

খুলনা গেজেট/লিপু/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!