মঙ্গলবার । ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ । ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

‘বিষ দি‌য়ে মাছ শিকা‌রের ফ‌লে সুন্দরব‌নের পু‌রো ইকো‌সি‌স্টেম নষ্ট হ‌চ্ছে’

ত‌রিকুল ইসলাম

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের আওতা‌ধিন খুলনা রেঞ্জের আয়োজনে বাঘ সংরক্ষণে গুরুত্বারোপ করে জনসচেতনতা বিষয়ক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘বাঘ আমা‌দের অহংকার, রক্ষার দা‌য়িত্ব সবার’ এই স্লোগান‌কে সাম‌নে রে‌খে বৃহস্প‌তিবার (২৭ ফেব্রুয়া‌রি) সকাল সাড়ে ১০টায় কয়রা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সে‌মিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বা‌সের সভাপতিত্বে সেমিনারে সম্মা‌নিত অতিথি হিসেবে সি‌নিয়র উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আজহারুল ইসলাম বন আইনের বিভিন্ন দিক, ধারা ও উপধারা নিয়ে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করেন। সে‌মিনা‌রে মূল প্রবন্ধ পাঠ ক‌রেন খুলনা রে‌ঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ শ‌রিফুল ইসলাম। কা‌শিয়াবাদ ফ‌রেস্ট স্টেশ‌নের স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ সা‌দিকুজ্জামানের সঞ্চালনায় অন‌্যা‌ন্যের ম‌ধ্যে আলোচনা ক‌রেন উপ‌জেলা কৃ‌ষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার, ‌সি‌নিয়র উপ‌জেলা মৎস‌্য কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার, মাধ‌্যমিক শিক্ষা অ‌ফিসার মোঃ আবুল কালাম আজাদ, কয়রা প্রেসক্লা‌বের আহবায়ক শেখ হারুন অর রশিদ, কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ শরিফুল আলম, সিএমসি সদস্য সাইফুল ইসলাম, পিএফ সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান লিটন, ভিটিআরটি সদস্য ইয়াছিন আলী, বনজীবি দেলবার হোসেন, নুরী শেখ প্রমুখ।

সে‌মিনা‌রে সামা‌জিক সংগঠন উপকূল ও সুন্দরবন সুরক্ষা বলয়ের অন‌্যতম সদস‌্য মোঃ ইম‌তিয়াজ উদ্দীন ব‌লেন, বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া মূল্যে চোরাইপথে বিক্রি করতে একটি চক্র বিষটোপ বা ফাঁদে ফেলে বাঘ হত্যা করে। ওই চক্রকে চিহ্নিত করে ১৫৩ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল ইন্টারপোল। রাজনৈতিক মদদপুষ্ট অনেকে জড়িত থাকায় কিছুই হয়নি তাদের। চক্রের মূলোৎপাটন না করতে পারলে বাঘ টিকানো যাবে না।

সাংবা‌দিক মোঃ ম‌নিরুজ্জামান মনু ব‌লেন, যা‌দের সুন্দরবন রক্ষা করার কথা তারাই ধ্বংস কর‌ছে। দীর্ঘ‌দিন সিএম‌সি ক‌মি‌টির কার্যক্রম নেই। পূ‌র্বের ক‌মি‌টির অ‌নে‌কেই অপরা‌ধী‌দের সহ‌যো‌গিতা কর‌ছে, এমন‌কি নি‌জেরা অপরা‌ধের সা‌থে জ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে‌ছে। অপরাধকারী ও তা‌দের সহ‌যো‌গি‌দের বিরু‌দ্ধে প্রতি‌রোধ গ‌ড়ে তুল‌তে হ‌বে।

উপ‌জেলা মাধ‌্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ব‌লেন,শুধু আইন দি‌য়ে সুন্দরবন কে‌ন্দ্রিক অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়। প্রতিকা‌রের চে‌য়ে প্রতি‌রোধ শ্রেয়। এজ‌ন‌্য জনস‌চেতনতা বাড়া‌তে হ‌বে।

অন‌্যান‌্য বক্তারা ব‌লেন, বাংলা‌দে‌শের ফুসফুস সুন্দরব‌ন। এই সুন্দরবন রক্ষায় আমা‌দের সকল‌কে কাজ কর‌তে হ‌বে। ক‌তিপয় অসাধু‌দের ব‌্যক্তিস্বার্থ হা‌সি‌লের জন‌্য সুন্দরব‌নের অপার সম্ভবনা নষ্ট হ‌চ্ছে। বিষ দি‌য়ে মাছ শিকার ক‌রে পু‌রো ইকো‌সি‌স্টেম নষ্ট করা হ‌চ্ছে। প্রভাবশালী‌দের ম‌নোরঞ্জ‌নে হ‌রিণ শিকার বাড়‌ছে। পর্যটকরা প্লা‌স্টিক ফে‌লে ক্ষ‌তি কর‌ছে। এসব নির্মূ‌লে স‌চেতনতা বাড়া‌নোর বিকল্প নেই। নিয়মনী‌তি মে‌নে সুন্দরব‌নে যাওয়ার আহবান জানান।

আরও জানা‌নো হয়, সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অসংখ্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব দূষণ বাঘের ক্ষতি করছে। লবণাক্ততা বাড়তে থাকায় প্রয়োজনীয় মিষ্টি পানি না পেয়ে নোনা পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বাঘ। তার ওপর অপরিকল্পিত পর্যটন ও বনের মধ্য দিয়ে ভারী নৌযান চলাচলের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাঘের বংশবৃদ্ধির ওপর। বাঘের বংশবৃদ্ধি ও বাঘ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাঘ টিকে না থাকলে সুন্দরবনও থাকবে না। সুন্দরবন না থাকলে পুরো বাংলাদেশ সংকটে পড়বে।

সেমিনারে সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিক্ষক, সিএমসি সদস্য, পিএফ সদস্যসহ বননির্ভর বনজীবি সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন