খুলনা মহানগরে সম্প্রতি আলোচিত দু’টি হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। স্ত্রীর পরকীয়ায় বাঁধ সাধায় খুন হন বেসরকারি মোবাইল অপারেটর বিক্রয় প্রতিনিধি আল আমিন ওরফে ইমন। অপরটি খুলনায় দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে হত্যা করা হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসনের ছাত্র অর্ণব কুমারকে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কেএমপি’র সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনই তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কুতুব উদ্দিন।
বেসরকারি মোবাইল অপারেটর বিক্রয় প্রতিনিধি আল আমিন ওরফে ইমন হত্যাকান্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের বলি হন তিনি। স্ত্রী লামিয়া ইসলাম সুমি পরকীয়া প্রেমে আসক্ত ছিলেন। খুলনার বড় বাজার এলাকার ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সাহার সাথে নিহতের স্ত্রী লামিয়া ইসলাম সুমির পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। ইমন ঘটনাটি জেনে ফেলে এবং বিশ্বজিৎ সাহাকে কড়া ভাষায় ফোন করে গালিগালাজ করে। ইমনকে শায়েস্তা করার জন্য বিশ্বজিৎ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বজিৎ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পূর্বের কর্মচারী নাইম ও মুন্সিকে ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া করে। ঘটনার দিন সকাল ৮ টার দিকে নাইম ও মুন্সি ট্রাকষ্টান্ড রোড কাচা বাজারের সামনে উপস্থিত হয়।
এ সময়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন ২২ তলার সামনে পৌছালে বিশ্বজিৎ সাহা হত্যাকারীদের আল আমিন ওরফে ইমনকে চিনিয়ে দেয়। মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় সন্ত্রাসীরা ইমনের পেটের বাম পাশে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীর দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহতের বড়ভাই রাজিবুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকার সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইমন হত্যাকান্ডের অভিযোগে বিশ্বজিৎ সাহাকে পূর্ব রূপসা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার আদালতে হত্যাকান্ডের বিবরণ জানিয়ে বিশ্বজিৎ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। গ্রেপ্তার বিশ্বজিৎ সাহা নগরীর পূর্ব বানিয়াখামার লোহাগেট এলাকার মতিলাল সাহার ছেলে।
অর্ণব সরকার হত্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, সন্ত্রাসী পলাশ এবং কালা লাভলু’র সহযোগী ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসনের ছাত্র অর্ণব। খুব ছোট বেলা থেকে তাদের মধ্যে বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্ক তার জীবনে বড় কাল হয়ে দাড়ায়। গ্রেনেড বাবুর সদস্যরা তাকে হত্যা করে। এ হত্যাকান্ডে ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে ইনসান শরীফের কাছ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। অন্যান্য আসামিদের মধ্যে শাহারিয়ার সজল ও মাহিন হোসেন শুভ অর্ণব হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। বাকী আসামিরা পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও আদালতে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা এড়িয়ে যায়। দু’টি গ্রুপের দ্বন্ধের জেরে অর্ণব খুন হয় বলে আসামিরা স্বীকার করেছে।
এ হত্যা মামলায় গোলাম রাব্বানির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাব্বানির ডাকে সাড়া দিয়ে অর্ণব শেখপাড়া তেতুলতলা মোড়ে আসে। অর্ণব আসা মাত্র সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে এবং পরবর্তীতে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে।
ইনসানের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ওয়ান শুটারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরীতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে তাকে ওই অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে কি না।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো: মনিরুজ্জামান মিঠু, সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম, এসআই আশরাফুল আলম ও এসআই খালিদ উদ্দিন।
খুলনা গেজেট/সাগর/এমএম